বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আশুলিয়া থানার এসআই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে টাকা আদায়, নির্যাতনের অভিযোগ

  •    
  • ২০ জুলাই, ২০২৩ ১৪:১৯

অভিযোগকারীদের ভাষ্য, হয়রানি থেকে রেহাই পেতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে টাকা দিয়েছেন তারা, তবে এসআই নোমান সিদ্দিকী ও এএসআই বদরুল হুদা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের আশুলিয়া থানার একজন উপপরিদর্শক (এসআই) ও এক সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) বিরুদ্ধে আটক করে টাকা আদায় ও নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী দাবিদার একাধিক ব্যক্তি।

অভিযোগকারীদের ভাষ্য, হয়রানি থেকে রেহাই পেতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে টাকা দিয়েছেন তারা, তবে এসআই নোমান সিদ্দিকী ও এএসআই বদরুল হুদা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

কী বলছেন অভিযোগকারীরা

দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করা আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার নাজমুল হোসেন মোল্লা বলেন, ‘১১ জুলাই সন্ধ্যার দিকে কাঠগড়া পশ্চিমপাড়ায় আমার নির্মাণাধীন ভাড়া বাড়ির পাশে বসে ছিলাম বাড়ির কাজের শ্রমিকদের ২৪ হাজার টাকা দেয়ার জন্য। এ সময় আশুলিয়া থানার এসআই নোমান ও এএসআই বদরুল হুদাসহ তিনজন এসে আমাকে প্রাইভেট কারে তুলে নেয়। এ সময় আমি মাদক ব্যবসা করি অভিযোগ তুলে আমার পকেটে থাকা ২৪ হাজার টাকা নিয়ে নেয়।

‘পরবর্তী সময়ে মামলার ভয় দেখিয়ে আরও টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে, কিন্তু টাকা আনতে দেরি হওয়ায় প্রায় ৪/৫ ঘণ্টা ধরে আমাকে নির্যাতন করে তারা। এরপর আমার শ্যালক সবুজ আরও ৫০ হাজার টাকা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটের সামনে আসে। ওখানেই টাকা নিয়ে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। টাকা নেওয়ার পর ঘটনা কাউকে জানালে আবারও মাদক দিয়ে মামলা দেয়ার ভয় দেখায় পুলিশ।’

নাজমুলের ভাই আসাদ হাজী বলেন, ‘আমার ভাইকে এসআই নোমান ও এএসআই বদরুল নির্যাতন করে ৭৪ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। তারা পায়ের তালুতে পিটিয়েছে। আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়েই আপনাদের বলছি যে, এসআই নোমান ও এএসআই বদরুল আমার ভাইকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জামাল শিকদার গত ১৫ জুলাই দেখা করতে বলেছিল। তখন তার সামনে এসআই নোমান ও এএসআই বদরুল তাদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে।’

ভুক্তভোগী দাবি করা ভাদাইল এলাকার সুইপার আরিফ খান বলেন, ‘২৮ মে বাসার নিচে দোকানে দাঁড়িয়ে আইপিএল ফাইনাল খেলা দেখছিলাম। হঠাৎ পেছন থেকে এএসআই বদরুল ও তাদের সোর্স রোমান আমাকে জাপটে ধরে হ্যান্ডকাফ পরায়। পরে আমার ঘরে নিয়ে গিয়ে তল্লাশি করে অল্প গাঁজা পায়। আমি সুইপার মানুষ, আমি একটু গাঁজা খাই। এ জন্য আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে প্রথমে আমার ১০ বছরের বাচ্চা মেয়ের সামনে নির্যাতন শুরু করে। এ সময় আমার বড় মেয়ে এগিয়ে আসলে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এসআই নোমান।

‘মেয়েটাকে অনেক খারাপ মন্তব্যও করে সে। পরে হাতুড়ি ও প্ল্যায়ার্স এনে আমার ঘরের তালা ভেঙে তারা ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় বিছানার নিচে রাখা ৩২ হাজার টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নেয় এএসআই বদরুল।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরে বাসা থেকে আমাকে সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে কাশিমপুরের সারদাগঞ্জের কুয়েরি টেক্সটাইলের পাশে নিয়ে আরও টাকা দাবি করে। তখন আমার বড় মেয়েকে ফোনের লাইনে রেখে আমাকে নির্যাতন করতে থাকে পুলিশ। প্ল্যায়ার্স দিয়ে আমার নখে চাপ দিয়ে নির্যাতন করলে আমি চিৎকার করি।

‘নিরুপায় হয়ে আমার বড় মেয়ে তার জমানো ৫০ হাজার টাকা আমার বিকাশে পাঠায়। এসআই নোমান ও এএসআই বদরুল সেই টাকা পেয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি এখনও আতঙ্কে রয়েছি। এসব কাউকে জানালে আবারও আমাকে ধরে নির্যাতন ও মামলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে তারা।’

অপর ব্যক্তি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গত ৪ ফেব্রুয়ারি আমাকে ফোন করে থানায় দেখা করতে বলেন এসআই নোমান, কিন্তু আমি থানায় গেলেও তার সাথে দেখা না করে চলে আসি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মামলার চার্জশিটে আমার নাম ঢুকিয়ে চালান দেয়ার হুমকি দেন এসআই। এ সময় ১ লাখ টাকা দাবি করলেও পরে অনেক কষ্টে ৩০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে তাকে দিই। তারপরও সে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে।’

পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য

বিস্তর অভিযোগের বিষয়ে আশুলিয়া থানার এসআই নোমান সিদ্দিকী বলেন, ‘ভাদাইলের আলমগীরকে মামলা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, ভয়ভীতি দেখিয়েছি, কিন্তু টাকা নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। আর ওই এলাকা আমার বিট এলাকা। আরিফ খানকে খুঁজে বের করব। কে এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা জানতে চাইব। অন্য ঘটনার সাথেও আমি জড়িত নই।’

এএসআই বদরুল বলেন, ‘এসব বিষয় আমি জানি না। আপনি নোমান স্যারের সাথে কথা বলেন। এতকিছু করলে তো ভাই এই এলাকায় বাড়ি-গাড়ি করে ফেলতাম।’

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জামাল শিকদার তার সামনে অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।’

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোমেনুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি শুনলাম। আমি তাদের ডেকে বিষয়টি শুনছি।’

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এমন কিছু আমি তো জানি না, তবে বিষয়টি দেখছি।’

এ বিভাগের আরো খবর