বগুড়ায় গরু বিক্রির তিন লাখ টাকা চুরির অভিযোগে হাসান আলীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গাছের সঙ্গে উল্টো করে বেঁধে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার সকালে তাদের আটক করা হয়।
আটক দুজন হলেন নামুজা ইউনিয়নের ধলমোহিনী মধ্যপাড়ার ৪০ বছর বয়সী ইয়াকুব আলী ও ৪৫ বছর বয়সী রফিকুল ইসলাম।
নির্যাতনের শিকার ২২ বছর বয়সী হাসান আলী বগুড়া সদর উপজেলার নামুজা ইউনিয়নের ধলমোহিনী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি রফিকুলসহ এলাকার গরু ব্যবসায়ীদের সহকারী হিসেবে দিনমজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন।
গত ৯ জুলাই হাসান আলীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়ে পুলিশ দুই নির্যাতনকারীকে আটক করে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হাসান আলী বিভিন্ন হাটে গিয়ে অন্যান্য ব্যবসায়ীর পাশাপাশি রফিকুলের গরু বিক্রি পর্যন্ত হাটে গরু ধরে থাকতেন। গত কোরবানি ঈদের আগের দিন রফিকুলের গরু বিক্রির ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা চুরি হয়। এ চুরির ঘটনায় হাসান আলীকে দায়ী করেন রফিকুল।
মারধরের শিকার হাসান অভিযোগ করেন, গত ৮ জুলাই রাতে রফিকুলসহ কয়েকজন যুবক তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সদর উপজেলার দাড়িয়াল গ্রামে এক বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে টাকা চুরির জন্য দায়ী করে টাকা ফেরত দিতে বলেন। টাকা চুরি করেননি বলার পর তাকে বেধড়ক মারধর করেন। সারা রাত পেটানোর পর পরেরদিন বেলা ১১টার দিকে ঠেঙ্গামারা এলাকার একটি জঙ্গলে নিয়ে সেখানে তাকে মারধর করা হয়। এরপর গ্রামে নিয়ে গিয়ে একটি বাগানের ভেতরে গাছের সঙ্গে তার হাত-পা ঝুলিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়।
হাসান আলী জানান, খবর পেয়ে নামুজা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আবু জাফর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তিনি বগুড়া সদর থানায় অভিযোগ করেন।
ইউপি সদস্য আবু জাফর জানান, লোকমুখে এক যুবককে গাছে ঝুলিয়ে মারধর করার খবর পেয়ে হাসানকে উদ্ধার করা হয়। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এরপর ঘটনা শুনে রফিকুলকে টাকা হারানোর বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
গরু ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, টাকা চুরির বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করার পরেও টাকা উদ্ধারে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় হাসান আলীকে মারধর করা হয়েছে। ব্যবসার পুঁজি ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা হারিয়ে তার মাথা ঠিক ছিল না বলে জানান তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, হাসানকে হাত-পা বেঁধে মাটিতে শুইয়ে ফেলা হয়। তার পা ওপরের দিকে তোলে ইয়াকুব ও রফিকুল লাঠি দিয়ে পা ও শরীরের অন্যান্য স্থানে আঘাত করতে থাকেন। তাকে চুরির কথা স্বীকার করার জন্য চাপ দিতে থাকেন।
বগুড়া সদর থানার এসআই জাহিদ হাসান বলেন, ‘রফিকুল টাকা চুরি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমাদের কাছে দিয়েছেন। অভিযোগে বলেছেন, কোরবানির হাটের সময় তার কাছ থেকে টাকা চুরি হয়। সেই চুরির জন্য হাসান আলীকে তিনি দায়ী করছেন। গত ৯ জুলাই অভিযোগ দিয়েছেন। তারা হয়তো হাসান আলীকে নির্যাতন করার পর থানায় এসে অভিযোগ দিয়েছেন।’
বগুড়া সদর থানার ওসি (তদন্ত) শাহীনুজ্জামান শাহীন জানান, নির্যাতনের শিকার হাসান বাদী হয়ে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি নিয়ে তদন্ত চলছে।