শেরপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতার সমর্থকদের হামলায় আহত আরেক আওয়ামী লীগ নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন।
সোমবার ভোরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যু হয় তার।
স্থানীয়রা জানান, নূরে আলম বাহিনীর হামলার শিকার হয়ে ১৫ দিন পর মারা গেছেন ৫০ বছর বয়সী আব্দুল খালেক। তিনি সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর চকপাড়া গ্রামের মৃত ফরহাদ আলীর ছেলে।
শেরপুর জেলা ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন আব্দুল খালেক। বিকেলে হাসপাতাল মর্গে তার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে গত ২ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর চকপাড়া গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটে। তাকে শেরপুর সদরের কামারিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তার বড়ির কাছেই এক দোকানের সামনে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হাত পা, কোমড় ও মেরুদণ্ড ভেঙে দেন বলে অভিযোগ।
ওইদিন বিকেলে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ময়মসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন তাকে। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। ১৫ দিন পর এখানেই তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহত খালেকের স্ত্রী আসমাউল হোসনা বাদী হয়ে নূরে আলম সিদ্দিকীকে প্রধান আসামি করে তার সহযোগী সহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা করেন।
এ মামলায় পুলিশ ফারুক আহম্মেদ ও সোহেল রানা নামে ২ আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও কিছু দিন পরই তারা আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাইরে চলে আসেন। এরপর থেকেই প্রধান আসামিসহ অন্য সব আসামি পলাতক রয়েছেন।
স্থানীয় ফজলুল হক মাস্টার, সাইদুর রহমান ও জাকারিয়া বাদল জানান, আব্দুল খালেক ছিলেন এলাকার সমাজসেবক এবং নূরে আলম বাহিনীর নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। তিনি ২ বছর আগে সরকারি চাকরী ছেড়ে দিয়ে সমাজসেবার পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় হয়ে পড়েন এবং কিছুদিন আগে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ার ঘোষণাও দেন তিনি। এ নিয়েই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান তারা।
এ সময় তারা আরো বলেন, নূরে আলমের সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। নূরে আলম একটি প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে ছিলেন বলে অভিযোগ দেন তারা।
নূরে আলমের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে বিউটি নামের স্কুল ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় যাবজ্জীবন, ২০০৩ সালে গাজীপুরের সাড়ে ছয় বছর সাজা সহ ধর্ষণ, দুর্নীতি, ডাকাতি, চাদাঁবাজিসহ ২০টি ও ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১১টি দুর্নীতির মামলা তদন্ত এবং আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
খালেকের স্ত্রী আসমাউল হোসনা বলেন, ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় নুরে আলম ও তার বাহিনীর লোকজনের টার্গেটে ছিলেন আমার স্বামী। আমি দাবি জানাই প্রধান আসামী নূরে আলমসহ পলাতক সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তাারসহ স্বামী হত্যার সর্বোচ্চ শাস্তির।’
আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বাড়িতে গিয়ে বাড়িতে কোনো লোকজন পাওয়া যায়নি। বাড়ি তালা দেয়া ছিল। আর তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল বলেন, ‘সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আহত আব্দুল খালেক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে শুনেছি। তার মৃত্যুর সনদ সহ প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার পর মামলাটি হত্যা মামলায় মোড় নিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে। সেইসাথে এ ঘটনায় পলাতক প্রধান আসামি নূরে আলমসহ অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।‘