বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আনফেয়ার’ কৌশলে গ্রামবাসীর ১৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও ‘ফেয়ার সমিতি’

  •    
  • ১৬ জুলাই, ২০২৩ ১১:৩৭

গত বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সমিতির কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া ব্যক্তিরা এলাকায় থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজখুজি করে তাদের কোথাও দেখা মেলেনি।

মেহেরপুরে ঋণ দেয়ার কথা বলে একটি গ্রামের বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে ১৫ লাখের বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এক সমিতির কর্মীরা পালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গাংনী উপজেলার পোড়াপাড়া গ্রামে ‘ফেয়ার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি’র কর্মীরা সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা মেহেরপুর সদর ও গাংনী থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৫ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে অফিস উদ্বোধন ও ঋণ বিতরণের কথা বলে সম্প্রতি পোড়াপাড়া গ্রামের একটি বাড়ির সামনে তৈরি করা হয় দর্শনীয় গেট। অফিসে রাখা হয় ডেকোরেশন থেকে আনা বেশ কয়েকটি টেবিল। তার ওপরে কয়েকটি খালি ফাইল, রেজিস্ট্রার ও ফাইল বক্স।

গত বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সমিতির কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া ব্যক্তিরা এলাকায় থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজখুজি করে তাদের কোথাও দেখা মেলেনি।

জানা গেছে, একই উপজেলার গাড়াডোব পোড়াপাড়া গ্রামের কথিত কবিরাজ শাবানা ওরফে পানসির বাড়ি ভাড়া নেয়ার কথা বলে সেখানে আস্তানা গড়েন চার ব্যক্তি। তারা নিজেদেরকে ফেয়ার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির কর্মকর্তা পরিচয় দেন।

মানুষের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে সমিতি। ছবি: নিউজবাংলা

এই বাড়ি ভাড়ার চুক্তিনামা করার আলোচনার মধ্য দিয়ে কেটে যায় কয়েকদিন। এ ফাঁকে তারা একই উপজেলার গাড়াডোব, আলমপুর, শ্যামপুর ও সাহারবাটিসহ বিভিন্ন গ্রামে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে থাকেন। টার্গেট করেন ঋণ নিতে আগ্রহী এমন নারী পুরুষদের।

ওই কর্মীরা জানান, এক লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে সঞ্চয় জমা করতে হবে ১২ হাজর টাকা। এবং ঋণ পেতে সময় লাগবে মাত্র এক সপ্তাহ।

সমাজে প্রচলিত অন্য সমতি এতো অল্প সময়ে ঋণ না দেয়াই ঋণ প্রত্যাশীদের কাছে হয়ে ওঠে বেশ জনপ্রিয়। এমন শর্তে ওই গ্রামগুলোর অসংখ্য মানুষ অজানা-অচেনা মানুষগুলোর হাতে তুলে দেন টাকা। এলাকার মানুষের মৌখিক হিসেবে এ টাকার পরিমাণ ১৫ লক্ষাধিক বলে জানা গেছে।

টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ পড়েছেন উল্লেখ করে গাড়ডোব গ্রামের জলিবিল পাড়ার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘১২ জুলাই আমাদের পাড়ায় এক ব্যক্তি ওই সমবায় সমিতির পরিচয় দিয়ে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেন। পানসি কবিরাজের বাড়িতে ১০ লাখ টাকা সিকিউরিটি দিয়ে তারা অফিস নিয়েছেন বলে জানান আমাদের। ঋণ পাওয়ার জন্য আমরা লাখ প্রতি সাড়ে ১১ হাজার করে টাকা দেই।’

একই অভিযোগ করে গাড়াডোব জলিবিল পাড়ার আরেক ভুক্তভোগী সবজি ব্যবসায়ী বকুল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে সমিতির লোকের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে শুক্রবার সকালে পানসি কবিরাজের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান একটি গেট তৈরি করা হয়েছে। তবে অফিসের কাউকে পাওয়া যায়নি।

পরিচয় নিশ্চিত আর জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কীভাবে ঘর ভাড়া দিলেন জানতে চাইলে পানসি কবিরাজ বলেন, ‘চারজন গত ১২ জুলাই আমার বাড়িতে এসে ঘর ভাড়া নেয়ার আলোচনা করে। কাগজপত্র এবং তাদের ছবিসহ ঘরভাড়া চুক্তিনামা করতে বলে তারা।

‘এরপরে ১৫ জুলাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সব সম্পন্ন করবেন মর্মে আশ্বস্ত করেন তারা। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার তারা আমার ঘরে ডেকেরেশন থেকে চেয়ার টেবিল নিয়ে এসে ঘরে রাখেন। ডেকোরেশনের লোকজন বাড়ির প্রবেশ মুখে গেট করে দেন। এর পর থেকে আর তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’

ভুক্তভোগীরা সাধ্যমত চেষ্টা করেও ওই সমবায় সমিতির কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া ব্যক্তিদের হদিস পাচ্ছেন না। পরে শনিবার আলমপুরের এক ভুক্তভোগী মেহেরপুর সদর থানায় এবং গাড়াডোব গ্রামের এক ভুক্তভোগী গাংনী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সমিতির উদ্বোধনের জন্য বানানো হয় গেইট। ছবি: নিউজবাংলা

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিষটি তদন্ত করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে মানুষের উচিৎ সমাজসেবা অফিস থেকে খোঁজ খবর নিয়ে জেনেশুনে টাকা পয়সা লেনদেন করা।

মেহেরপুর জেলা সমবায় অফিসার প্রভাস চন্দ্র বালা বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় সমবায় অফিসে সরকার অনুমদিত সমবায় সমিতির লাইসেন্সের তালিকা আছে। স্থানীয়রা যদি মনে করে ফোন দিয়ে জানতে পারেন উনারা যেখানে টাকা জামানত রাখবেন তার আসলে অনুমতি আছে কি না।

তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকে সচেতন না হলে এ সব চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তাছাড়া ফেয়ার সমবায় সমিতির নামে আমাদের তালিকায় কোনো নাম নেই।

এ বিভাগের আরো খবর