বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিখোঁজের ২২ বছর পর ৮ সন্তানের কাছে ফিরলেন মা

  • প্রতিনিধি, পঞ্চগড়   
  • ১৫ জুলাই, ২০২৩ ২২:৪৪

বাড়ি ফিরেছেন মাজেদা। দীর্ঘদিন পর তার ফিরে আসায় আনন্দ বইছে গ্রাম জুড়ে, আপ্লুত পরিবারের সদস্যরা। তাকে দেখতে ছুটে আসছে বিভিন্ন এলাকার মানুষ৷ তবে বৃদ্ধা মাকে চিকিৎসা করানোট মতো সামার্থ্য না থাকায় অসহায় সন্তানরা৷

মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় ২২ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে ছিলেন ৬৫ বছর বয়সী মাজেদা খাতুন। বছরের পর বছর খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি স্বজনরা। সন্তানরা ধরে নিয়েছিলেন তাদের মা আর বেঁচে নেই। অবশেষে হারিয়ে যাওয়া সেই মাকে ফিরে পেলেন ৮ সন্তান।

বাড়ি ফিরেছেন মাজেদা। দীর্ঘদিন পর তার ফিরে আসায় আনন্দ বইছে গ্রাম জুড়ে, আপ্লুত পরিবারের সদস্যরা। তাকে দেখতে ছুটে আসছে বিভিন্ন এলাকার মানুষ৷ তবে বৃদ্ধা মাকে চিকিৎসা করানোট মতো সামার্থ্য না থাকায় অসহায় সন্তানরা৷

মাজেদা খাতুন বয়স ৬৫ বছর৷ বাড়ি উত্তরের জেলা পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের বোদাপাড়া গ্রামে, তিনি ওই এলাকার মৃত বছির উদ্দীনের স্ত্রী। ৪ ছেলে ও ৪ মেয়ের জননী মাজেদা ২০০১ সালে স্বামী-সন্তান রেখে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান।

শনিবার দুপুরে মাজেদা খাতুনের বড় ছেলে ফজলুল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির উঠোনে একটি চেয়ারে বসা তিনি। তাকে দেখতে সেখানে শতশত উৎসুক মানুষের ভিড়। তবে কাউকেই চিনছেন না এই বৃদ্ধা। এমনকি ৮ সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে এবং এক ছেলে ছাড়া বাকিদেরও চিনছেন না তিনি।

এর আগে, শুক্রবার তাদের এক স্বজন পার্শ্ববর্তী তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকার সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আফাজ উদ্দীনের বাড়িতে মাজেদা বেগমকে দেখতে পান এবং চিনতে পারেন। পরে সেই স্বজন সাথে সাথে মাজেদার বাড়িতে খবর দিলে খবর পাওয়ার মাত্রই শুক্রবার রাতে ছুটে যান তার সন্তানরা।

পরে সেখানে মাকে চিনতে পারে সন্তান এবং স্থানীয় গন্যমান্য,আশ্রয়দাতাসহ জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় বাড়িতে নিয়ে আসে মাজেদাকে। সেখানে গত ৪ বছর ধরে অবস্থান করছিলেন বলে জানান স্বজনরা।

এদিকে বছরের পর বছর খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান না পেয়ে ধরেই নিয়েছিলেন তার মা বেঁচে নেই। তার স্ত্রীর অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ২০০৯ সালে মারা যান স্বামী বছির উদ্দীন।

মাজেদা খাতুনের বড় ছেলে ফজলুল হক জানান, ২০০১ সালে তার বয়স ২০-২১ চলছিল। সবে বিয়ে করেছিলেন তিনি, এর মধ্যেই নিখোঁজ হয়ে যান তার মা। বছরের পর বছর খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান না পেয়ে ধরেই নিয়েছিলেন তার মা বেঁচে নেই। তার মায়ের অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ২০০৯ সালে মারা যান বাবা বছির উদ্দীন।

ফজলুল হক বলেন, মা যখন নিখোঁজ হন তখন আমার ভাইবোনরা অনেক ছোট ছিল। তারা মায়ের আদর-যত্ন সেভাবে পায়নি। মা ফিরে আসবে এমন আশা আমরা ছেড়ে দিছিলাম। এখন ফিরে আসায় আমরা কি পরিমাণ আনন্দিত বলে বুঝাতে পারবো না।

ফজলুল হকের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ফারজানা বলেন, আমার দাদিকে কখনো দেখিনি, উনি আছে এটাও জানতাম না। পাড়ার অন্য দাদিদের সঙ্গে যখন কথা বলতাম তখন নিজের দাদির খুব অভাববোধ করতাম। হঠাৎ করে কালকে দাদিকে পেয়েছি, এটা অনেক বড় পাওয়া। আমরা সবাই খুব খুশি।

মাজেদা বেগমের ছোট ছেলে মফিদার রহমান বলেন, ৫-৬ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছি। ছোট থেকেই মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। এতদিন পর মাকে পেয়েছি, কিন্তু আমার মা আমাকে চিনতে পারছেনা- বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, আমার মা এখনো মানসিকভাবে অসুস্থ, তিনি সুস্থ্য হলে সবাইকেই চিনবেন বলে আশা করি।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক নুরুজ্জামান বলেন, এই বৃদ্ধা সম্পর্কে আমার চাচি হবেন। তার ফিরে আসার খবরে ছুটে এসেছি, এসে দেখলাম তিনি এখনো ভারসাম্যহীন। তার সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু তার সন্তানরাও তেমন স্বচ্ছল নয়। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার খবর পাই এই বৃদ্ধা তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নে আছেন। পরে তার ছেলেসহ সেখানে যাই এবং তাকে নিয়ে আসি। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ, তার এখন সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময় এই বৃদ্ধার খোঁজখবর রাখবো এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যেকোন সুযোগ সুবিধা এলে তাকে দেয়া হবে।

এ বিভাগের আরো খবর