বিএনপির আসলে কয় দফা দাবি এটা নিয়েই অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বুধবার নয়াপল্টনে সমাবেশ করে এক দফা ও বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে ৩১ দফা ঘোষণা করেন। এ অবস্থায় অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে যে আসলে বিএনপির দফা কয়টা।’
শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির যে এক দফা, এটাও ওনারা কিছুদিন পর পর বছরান্তেই এক দফার আন্দোলন বলে উল্লেখ করেন। ২০১৩ সাল থেকেই এক দফার আন্দোলন শুনে আসছি। এটি হচ্ছে সাপের খোলস বদলানো এবং একই ঢোল বার বার বাজানোর মতো। এতে নতুনত্বের কিছু নেই।
‘নতুনত্ব যেটি আছে, সেটি হচ্ছে তারা উম্মুখ হয়ে বসে ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা যখন আসবেন তখন তারা তাদের কর্মসূচি পালন করবে। সে অনুযায়ী তারা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিদেশিদের দেখানোর উদ্দেশ্য ছিল- তারা কত বড় সমাবেশ করতে পারে।’
বিদেশি প্রতিনিধিদের কোনো আলাপেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা বর্তমান সরকারের পদত্যাগের বিষয় আসেনি উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি আশা করেছিল বিদেশি প্রতিনিধিরা এসে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের কথা বলবে। এটা কেউ বলেনি।
‘কারও সঙ্গে কোনো আলাপে এই প্রসঙ্গটাই আসেনি। বিএনপির এক দফা হচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকার গঠন। এটি বাংলাদেশে যেমন হালে পানি পায়নি, বিদেশিদেরও কারও সমর্থন পায়নি।
‘শুধু আলোচনায় এসেছে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। এমনকি সবার অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন- সেই কথাটাও আসেনি। অবশ্যই আমরা চাই বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। সবাইকে নিয়ে আমরা নির্বাচন করতে চাই। তবে সংবিধান অনুয়ায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, নয়াপল্টনের সামনে পুরো রাস্তাজুড়ে বড়জোর ৩০ হাজার মানুষ ধরে। সেখানে না হয় আরও ১০ হাজার আমি যোগ করলাম। এর চেয়ে তো বেশি মানুষ হয়নি সেখানে। আর ১২ ঘণ্টার নোটিশে তিনটি রাস্তাজুড়ে আমরা লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ করেছি। সবাই দেখেছে আওয়ামী লীগ কত বড় সমাবেশ করার ক্ষমতা রাখে।’
সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সরকার সংলাপের উদ্যোগ নেবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সংলাপ নিশ্চয়ই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে হতে পারে। সুতরাং নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যদি কোনো কথাবার্তা বলতে হয় সেটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বলতে হবে। তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে যেতে পারে। সেখানে তারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি আমাদের ডাকে আমরাও যাব।’
এর আগে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যান্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সঙ্গে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের কিছুটা তফাৎ রয়েছে। কারণ এখানে অনেক দেশের শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে। এখানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সর্ম্পূণ ফ্রি পড়ার জন্য বৃত্তি দেয়া হয়।
‘এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে, চার বছর পড়াশোনার পর কোর্স সমাপ্ত করে একজন শিক্ষার্থীর ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই এসব শিক্ষার্থীর মাঝে এই পরিবর্তন সৃষ্টি করেন।’
ডিজিটাল বাংলাদেশের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কম্পিউটার সায়েন্স-ব্রিজ প্রোগ্রাম চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আশা প্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান নির্বাচনের ইশতেহার হিসেবে উত্থাপন করেছি। ভারত ও যুক্তরাজ্য করেছে ২০১১ সালে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৮ কোটি মোবাইল সিমকার্ড ব্যবহার হয়, যদিও আমাদের জনসংখ্যা আরও কম। কিন্তু একজন একাধিক সিম ব্যবহারের কারণে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে কেউ পরিবারে টাকা পাঠাতে চাইলে তা এক ঘণ্টার মধ্যে সম্ভব।
‘কুতুবদিয়া, মহেশখালী কিংবা শাহপরীর দ্বীপের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন শিক্ষার্থীও ঘরে বসে অনলাইনে ক্লাস করতে পারে। এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ। এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য আপনারা শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষিত করে তুলছেন। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরাও এই ভার্সিটিতে তৈরি হয়ে উঠছেন। এখন আপনারা বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করতে পারেন, যা শিক্ষার্থীদের উপকারে আসবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই বিশ্ববিদ্যালের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।’
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল এখানে আন্তর্জাতিক মানের মেডিক্যাল স্কুল ও হাসপাতাল গড়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন ড. হাছান। তিনি বলেন, এজন্য আপনাদের আরও কিছু জায়গার প্রয়োজন। আমি এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আপনারাও আপনাদের পক্ষ থেকে প্রক্রিয়া চালিয়ে যান।
‘চট্টগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক মানের মেডিক্যাল স্কুল ও হাসপাতাল গড়ে উঠলে এখানে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় রোগীরাও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সেবা পাবে।
অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য ডেভিড টেলর, কম্পিউটার সায়েন্স ব্রিজ প্রোগাম-এর পরিচালক অধ্যক্ষ শাম্স ফররুখ আহমেদ, অনলাইনে ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. রুবানা হক, প্রফেসর শাহাদাত হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠান শেষে কোর্সের শিক্ষার্থীদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।