ভারী বর্ষণের প্রভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। ডুবছে নতুন নতুন এলাকা।
লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিস্তা নদীর আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকার মানুষজন তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও স্কুল-কলেজগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন।
কুড়িগ্রামে দুধকুমার নদ শুক্রবার বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার নিচে থাকলেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে দ্রুতই তা বিপদসীমা ছাড়াতে পারে।
পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে করতোয়া, মহানন্দা, ডাহুকসহ ছোট-বড় ২৬টি নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা নদীর পানি শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও পরে তা ডালিয়া পয়েন্টে কমে ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে ধরলা নদীর পানি সকাল ৬টায় শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কয়েকদিন পানি উঠানামা করলেও গত দুদিন থেকে পানি টানা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ৫টি উপজেলার নদীবেষ্টিত নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি প্রবেশ করায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা নদীর আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার অতিক্রম করায় খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট। ছবি: নিউজবাংলা
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা ও ধরলা নদীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’
কুড়িগ্রামে পানিবন্দি দশ হাজার মানুষ
শুক্রবার বিকেল ৩টায় দুধকুমার নদ বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারীতে বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এসব নদীর পানিও দ্রুত বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এই পানি বৃদ্ধির অবস্থা ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তারপর পানি নেমে যাবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো বাঁধ বন্যায় ডুবে যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, নাগেশ্বরী উপজেলায় একটি সড়ক সংস্কারের কাজ করছে পাউবো। সেটির দুটি অংশ প্লাবিত হয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, ইতোমধ্যে ৬৫ টন চাল উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫৮৫ টন চাল, ১০ লাখ টাকা ও ১ হাজার ৭শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। বন্যার্তদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা পেলেই বরাদ্দ দেয়া হবে।
শুক্রবার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন।
ভারী বর্ষণে পঞ্চগড়ে ডুবছে নতু নতুন এলাকা। ছবি: নিউজবাংলা
পঞ্চগড়ে ২৪ ঘণ্টায় ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত
পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে করতোয়া, মহানন্দা, ডাহুকসহ ছোট-বড় ২৬টি নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারি বর্ষণে নিচু এলাকা সহ ফসলি জমি আমনের বীজতলা ডুবে গেছে। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় পৌর এলাকার প্রায় দেড় হাজার মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
ভারি বর্ষণে গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছে মানুষ। পানিতে ডুবে গেছে এসময়ের অর্থকরী ফসল। খাবার পানিসহ নিরাপদ খাবারের অভাবে শিশুসহ অনেক নানা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
শুক্রবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
তিনি জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তেঁতুলিয়ায় বৃহস্পতিবারও ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।