পর্যটকের ছদ্মবেশে ইয়াবা কারবারে যুক্ত একজনসহ পাঁচ কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজধানীতে তিনটি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিএনসি ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (উত্তর)।
ডিএনসি জানায়, গ্রেপ্তারের সময় কারবারিদের কাছ থেকে ৪১ হাজার ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন সাধন তঞ্চঙ্গ্যা, ফাতেমা, মমিনা বেগম, ইয়াকুব আলী ও মো. নাঈম।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে শুক্রবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধান মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী এসব তথ্য জানান।
চা বিক্রেতার ছদ্মবেশে ইয়াবা কারবারিকে গ্রেপ্তার
মজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আসে, গাবতলী এলাকায় একটি চক্র বিপুল পরিমাণ ইয়াবার একটি চালানের লেনদেন করবে। তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ডিএনসির ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ের কর্মকর্তারা চা বিক্রেতার ছদ্মবেশে সেখানে অবস্থান নেয়। বেলা ১১টার দিকে রাঙ্গামাটি হয়ে উত্তরবঙ্গের মাদক চোরাকারবারিদের অন্যতম সদস্য সাধন তঞ্চঙ্গ্যাকে নারীদের পেটিকোটের ভেতরে বিশেষভাবে তৈরি পকেটে ১১ হাজার পিস ইয়াবাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘গ্রেপ্তারের পর সাধন জানায়, টেকনাফ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে প্রথমে রাঙ্গামাটি নিয়ে যায়। সেখান থেকে একটি পরিবহনে গাবতলী এলাকায় অবস্থানরত উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের মাদক কারবারির কাছে সরবরাহ করে।’
নৌপথে চাঁদপুর হয়ে ঢাকায় ইয়াবা চোরাচালান
মজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আসে টেকনাফের একটি মাদকচক্র প্রথমে চাঁদপুর অবস্থান করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ও চোখ ফাঁকি দিয়ে সেখান থেকে নৌপথে লঞ্চে করে ঢাকায় মাদক চোরাচালান করছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় একটি চক্রের দুইজন নারী সদস্য চাঁদপুর থেকে লঞ্চে করে ইয়াবার একটি চালান নিয়ে সদরঘাট এলাকায় অবস্থান করবে। ডিএনসির অপর একটি দল অভিযান পরিচালনা করে ফাতেমা ও মমিনা বেগমকে ৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে।
‘গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তাদের দুজনের বাড়ি টেকনাফে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ফাঁকি দিয়ে টেকনাফ থেকে প্রথমে ইয়াবার চালান নিয়ে চাঁদপুর অবস্থান করে এবং পরবর্তী সময়ে লঞ্চে করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে তারা বাড়তি সতর্কতা হিসেবে লাগেজের ভেতরে বিশেষ কৌশলে চেম্বার করে লুকিয়ে ইয়াবা পরিবহন করে। একই পদ্ধতিতে তারা একাধিক ইয়াবার চালান ঢাকায় নিয়ে এসেছে।’
পর্যটকের ছদ্মবেশে মোটরসাইকেলে ইয়াবা পাচার
মজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আসে, রংপুরকেন্দ্রিক কুখ্যাত মাদক কারবারি ও একাধিক মাদক মামলার আসামি ইয়াকুব আলী দীর্ঘদিন মিরপুর ও উত্তরবঙ্গের রংপুর অঞ্চলে ইয়াবা সরবরাহ করে আসছে। তার মাদক চোরাচালানের কৌশল একটু ভিন্ন ধরনের। টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে সে সরাসরি নিজেই মাদকদ্রব্য সংগ্রহ ও পরিবহন করে ঢাকায় নিয়ে আসে। প্রথমে টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অবস্থান করে স্থানীয় মাদক কারবারিদের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে সেখানকার হোটেলে মজুত করে।
‘পরবর্তী সময়ে ইয়াবার বড় চালান বিভিন্ন কৌশলে সে ঢাকায় নিয়ে আসে। এ জন্য তার রয়েছে প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল। তার সহযোগীরা প্রাইভেট কারে করে প্রথমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে। তাদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর মোটরসাইকেলে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় আসে।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘মোটরসাইকেলে সে ট্রাভেলারের বেশভূষা ধারণ করে, যাতে সহজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়া যায়। এই পদ্ধতিতে সে বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান নিয়ে আসে বলে আমাদের কাছে তথ্য ছিল। এসব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে আমরা দীর্ঘদিন তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকি এবং সর্বশেষ জানতে পারি কক্সবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা নিয়ে মিরপুরের কালশী এলাকায় আসবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে রমনা ও গুলশান সার্কেলের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় কালশী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।
‘মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে আসলে ২৫ হাজার পিস ইয়াবা ও মোটরসাইকেলসহ ইয়াকুব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইয়াকুব কক্সবাজারে অবস্থান করে স্থানীয় মাদক কারবারিদের থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে মোটরসাইকেলে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং এ ইয়াবার চালান পরবর্তী সময়ে সুযোগ বুঝে রংপুরে নিয়ে যেত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সাতটি মাদক মামলা রয়েছে।’
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তেজগাঁও সার্কেলের অপর একটি দল ফার্মগেট এলাকা থেকে মাদক কারবারি নাঈমকে এক হাজার ইয়াবা বড়িসহ গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।