চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের জাকনী মিজি বাড়ির বাসিন্দা আবুল বাশার মুন্সী। শতবর্ষী মানুষটি দুই ছেলে ও চার মেয়ের বাবা।
মসজিদে ইমামতি ও মুয়াজ্জিন আর মক্তবে পড়ানোর আয়ে অর্জিত সবই দিয়েছেন সন্তানদের। মেয়েদের বিয়ে আর দুই ছেলেকে স্বাবলম্বী করার স্বপ্ন পূরণে নিজের দুই একর সম্পত্তিও বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি। শেষ আশ্রয়স্থল ঘরটুকু বিক্রি করতে হয়েছে ছোট ছেলের দালান নির্মাণের জন্য।
এখন শেষ বয়সে এসে ছেলেদের সংসারে ঠাঁই হচ্ছে না তার। দুই বছর আগে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আরও একাকি হয়ে পড়েছেন তিনি। হাজীগঞ্জ উপজেলার মৈশাইদ গ্রামে মেয়ের বাড়িতে কয়েক বছর ধরে দিন কাটছে তার।
প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সামাজিকভাবে জনপ্রতিনিধিদের সাহায্যে আবুল বাসার মুন্সীর দায়িত্ব নেয়া হবে।
আবুল বাসার মুন্সী বলেন, ‘বড় ছেলের পেছনে বেশিরভাগ সম্পত্তি খোয়া গেছে। তাকে কয়েকবার বিদেশে পাঠানোর জন্য সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়। ছোট ছেলেকে আমার ঘর বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আর আমি ছাড়া আমার কেউ নেই।’
মেয়ে নুরজাহান বেগম বলেন, ‘ভাইয়েরা বছরে দুই-একবার খোঁজ নেয়। তখন ৫০০ বা এক হাজার টাকা দেয় বাবার খরচের জন্য।’
বোনেরা নিয়মিত খবর নেয় বলেও জানান তিনি।
সৌদি প্রবাসী বড় ছেলে শাহদাতের জন্য বাবার সম্পত্তি সব খোয়াতে হয়েছে। ছুটিতে বাড়িতে এলেও বাবাকে আশ্রয় না দেয়ার প্রসঙ্গে বক্তব্য দিতে নারাজ শাহদাত।
ছোট ভাই আনোয়ারের স্ত্রী বলেন, ‘সন্তানদের নিয়ে সংসারের কাজ করাটাই তার জন্য কষ্টকর। তাই শ্বশুরকে তিনিও রাখতে পারছেন না।’
হাজীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ’বৃদ্ধ অসহায় বাবার প্রতি সন্তানদের এমন আচরণ ঘৃণীত কাজ। পিতা-মাতার জন্য ২০১৩ সালের ভরণ-পোষণ আইনে সন্তানদের জন্য জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।’
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম তানজীর বলেন, ’এমন ঘটনা কখনও কাম্য নয়। সামাজিকভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আবুল বাশার মুন্সীর সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’