রাজধানীর রাজারবাগ পিরের মুরিদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভির এক প্রতিবেদকের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।
রাজারবাগ পিরের মুরিদ সাকেরুল কবির মামলাটি করেন।
মামলায় আরটিভির ঢাকা কার্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক অধরা ইয়াসমিনসহ ঢাকার শেওড়াপাড়া এলাকার মো. একরামুল আহসান কাঞ্চন নামের এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জহিরুল কবিরের আদালতে ১৩ জুন মামলাটি করা হলেও এক মাস পর বিষয়টি জানাজানি হয়।
বৃহস্পতিবার মামলার বিষয়টি নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. কামরুল ইসলাম।
আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) নোয়াখালী জেলা ইউনিটকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, আরটিভিতে ৩০ এপ্রিল প্রচারিত ‘হালাল মামলার ফাঁদ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সাকেরুলের বিরুদ্ধে মিথ্যা, মানহানিকর, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
বিবরণে আরও বলা হয়, মামলার অন্য আসামি একরামুলের সহযোগিতায় বাদীকে সামাজিক ও আর্থিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। একরামুল ‘সত্যের সন্ধানে’ নামের নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিবেদনটি শেয়ার করেন। এতে বাদীর চরম মানহানি হয়েছে, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ।
চট্টগ্রামে মামলা করার বিষয়ে বাদী বিবরণে উল্লেখ করেন, তিনি ১২ মে ব্যবসায়িক কাজে চট্টগ্রামে যান। সেখানে কাজ শেষে দুপুরে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় আলিমুল ইসলাম খসরু নামের পরিচিত একজনের বাসায় দাওয়াত খেতে যান। দুপুরের খাবার শেষে আলিমুল তাকে ‘হালাল মামলার ফাঁদ’ নামে আরটিভিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির বিষয়ে জানান। তখন তিনি প্রতিবেদনটি ফেসবুকে দেখে এ বিষয়ে অবগত হন।
বাদী উল্লেখ করেন, প্রথমে বায়েজিদ থানায় মামলা করার জন্য গেলেও থানা মামলা গ্রহণ করেনি। পরে আদালতে মামলা করেন তিনি।
সম্প্রতি মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান নোয়াখালী জেলা সিআইডির পরিদর্শক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তিনি আরটিভির প্রতিবেদক অধরা ইয়াসমিনকে ১৪ জুলাই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোয়াখালী জেলা সিআইডি কার্যালয়ে হাজির হতে চিঠি দেন। এরপরই বিষয়টি জানাজানি হয়।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মামলাটি এখানে কেন এসেছে, আমি বুঝতে পারছি না। সেটা আদালত জানেন।
‘যেহেতু আমি দায়িত্ব পেয়েছি, আমি পুরো বিষয়টা তদন্ত করছি। নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।’
মামলায় অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক অধরা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার নিউজে সব তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেছি। এই মামলাবাজ সিন্ডিকেটটা মানুষের জায়গা-সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে ভুক্তভোগীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় একেকজনের নামে অসংখ্য মামলা করে।
‘এই সিন্ডিকেটে বেশ কয়েকজন আছে। এরা একজন মামলার বাদী হন তো, অন্যরা মামলার সাক্ষী হন। আবার মামলার সাক্ষীদের ঠিকানাও দেশের বিভিন্ন জায়গায়।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘শুরুতে আমি যখন সংবাদটি নিয়ে অনুসন্ধান করছিলাম, তখন আমার ওপর বিভিন্নভাবে চাপ দেয় তারা, যেন সংবাদটি না করি। পরে যখন সংবাদটি প্রকাশ হলো, আমাকে হয়রানি করতে মামলা করল চট্টগ্রামে। আবার মামলাটির তদন্ত গেল নোয়াখালীতে।’
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার বাদী সাকেরুল কবিরের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।