সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্তির এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে দলটির পক্ষ থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গণপদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বুধবার আয়োজিত সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকের এই সভা এবং যে ঘোষণা সেটি ঐতিহাসিক একটি ঘোষণা। এটি জাতিকে মুক্ত করার ঐতিহাসিক আহ্বান। জাতিকে তার হারানো অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান।
‘আমাদের একটাই দাবি- জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী, ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী এই সরকারের পদত্যাগ। এক দফা এক দাবি- অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের এই এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা ব্যক্তি মির্জা ফখরুলের নয়; তরুণ প্রজন্মের তারুণ্যের নেতা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা। দেশের ১৮ কোটি মানুষ, যারা গণতন্ত্রের জন্য তাকিয়ে আছেন, তাদের জন্য ঘোষণা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব রাজনৈতিক দল এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছি, তারা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে একটি যৌথ ঘোষণা দেবো। সেই ঘোষণা হলো আমাদের এক দফার আন্দোলন। আর কোনো কথা নেই। এক দফার আন্দোলন- এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ।’
নয়াপল্টনে বুধবার বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মী-সমর্থকদের একাংশ। ছবি: নিউজবাংলা
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের আর কথা বলার সময় নেই। আমাদের এখন একটাই কাজ- ভয়াবহ লুটেরা, ফ্যাসিস্ট, সংবিধান লঙ্ঘনকারী, যারা মানুষের সব অর্জন কেড়ে নিয়েছে, তাদেরকে সরিয়ে দেয়া।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার আমাদের শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে, শত সহস্র নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা তরিণদের ক্যারিয়ার নষ্ট করেছেন।
‘আজ আমাদের তরুণরা রুখে দাঁড়িয়েছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্লোগানে তারা আস্থা রেখেছে। আমাদের স্লোগান- তুমি যদি রুখে দাঁড়াও তবেই তুমি বাংলাদেশ।’
সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নির্দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমেই আমরা ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। তবে সেই নির্বাচন আপনাদের মতো শেয়ালের হাতে হতে দেয়া যাবে না। আপনারা বার বার কুমিরের বাচ্চা দেখানোর মতো নির্বাচন গিলে খেয়ে ফেলেছেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে খেয়েছেন, আবারও খেতে চাইছেন। সেই সুযোগ আর দেয়া হবে না।
‘সমাবেশে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়ইব মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েশি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা ও সফল করার ঘোষণা দিচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের এই দাবি আদায়ে ১৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে। একইভাবে এদিন সারাদেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এই কর্মসূচি করা হবে। আর পরদিন ১৯ জুলাই ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে।’
সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই কর্মসূচির ঘোষণা দিলাম। ওইদিন কর্মসূচি পালনের আগেই দাবি মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দেবেন, পদত্যাগ করে বিদায় নেবেন। যদি বিদায় না নেন, তারপর তো আরও কর্মসূচি আসছেই। কঠোর কর্মসূচি দিয়ে আপনাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে জনগণ।’