বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনাতে এড়াতে রাজধানীর প্রবেশপথ নারায়ণগঞ্জের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আর সাইনবোর্ড এলাকায় বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের দাবি, সমাবেশে যোগদানে বাধাসহ ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পুলিশের এ আয়োজন। মঙ্গলবার রাত থেকে নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে তল্লাশি ও আটকের নামে হয়রানি করা হয়েছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তত ৩০ জনকে।
বুধবার সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট মহাসড়কসহ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, পুরাতন সড়ক, আদমজী নগর সড়কের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ঢাকার মূল প্রবেশপথ সাইনবোর্ড এলাকাতে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। সাঁজোয়া যান, ওয়াটার ক্যান, এপিসি ভ্যানসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এ ছাড়া শীমরাইল, মেঘনা টোলপ্লাজা, গাউছিয়া, পাগলা, শিবু মার্কেট এলাকাতে পুলিশি নজরদারি দেখা গেছে। এ সময় সড়কের কোথাও জটলা কিংবা সন্দেহভাজন মনে হলেই পথচারী ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
এদিকে বাস, প্রাইভেটকারসহ ব্যক্তিগত যানবাহনের পুলিশ তল্লাশিতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকার কমলাপুরের যাত্রী রহমান মিয়া বলেন, ‘পুলিশ গাড়িতে উঠে নানা কথা জিজ্ঞাসাবাদ করছে, চেক করছে। বিএনপি সমাবেশ তাদের লোকজনকে করুক সাধারণ মানুষকে কেন হয়রানি করা হচ্ছে ৷’
পায়েল নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘আজকে ঢাকা তেজগাঁওয়ের পলিটিক্যাল কলেজে আমার পরীক্ষা। এজন্য কলেজে যাচ্ছি। এর মধ্যে বাস থামিয়ে পুলিশ নানাজনকে নানা কথা জিজ্ঞেসাবাদ করছে, তল্লাশি করছে। এটি আসলে একটি লজ্জাকর পরিস্থিতি।’
যদিও এই তল্লাশিকে নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে দাবি করে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম জহিরুল ইসলাম জানান, সাইনবোর্ড এলাকা পুলিশের চেকপোস্ট সব সময়ই থাকে। এটি নিয়মিত কার্যক্রম।
বিএনপির দাবি অনুযায়ী গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীরা হলেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ ভূইয়া, কাঞ্চন পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ কোহিনুর আলম, সহ সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান জাকির, কাঞ্চন পৌরসভা জিয়া মঞ্চের সভাপতি সফিকুল ইসলাম, বোলাব ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা নাসিরুল ইসলাম, ভুলতা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. শাহীন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য গাজী মনির, থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. ইসমাইলের ছেলে বিএনপি নেতা গাজী মাসুম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য হযরত আলী, ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. জাহিদ হোসেন, আলফাজ উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ার বিএনপি নেতা আক্তার হোসেন, মহানগর যুবদল নেতা মো. শাহীন শরীফ, কামরুল হাসান, আরিফ খান, আব্দুল কাদির, মোহাম্মদ সেলিম, সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুল জলিল, পিরোজপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি বাবুল ও কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. নাসিরসহ অনন্ত ৩০ জন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বলেন, ‘মহা সমাবেশের আগে নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাতে পুলিশ জেলা জুড়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে। তারা মহাসড়কে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে গণপরিবহনগুলোতে তল্লাশি চালাচ্ছে।
‘অনেক নেতা-কর্মীকে তারা রাস্তা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত জেলায় অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের বিষয় আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। এর মধ্যে রূপগঞ্জে ৬, সোনারগাঁয়ে ৩, সিদ্ধিরগঞ্জে ৫ ও মহানগরে ১৬ জন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।’
পুলিশ হয়রানি করছে দাবি করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা যাতে সমাবেশে অংশ নিতে পারে সেজন্য মঙ্গলবার সারা রাত বাড়িঘরে অভিযানের নামে হয়রানি করা হয়েছে। পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে সমাবেশে যাওয়া বন্ধ করা যাবে না। আমরা সমাবেশে যাবই।’
এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাউলাউ মারমা জানান, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের কোথাও যেন কোনো ধরনের হামলা, নাশকতা, অপ্রীতিকর ঘটনা ও জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কেউ করতে না পারে সেজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।
তিনি আরও জানান, পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে পুরনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা আছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ সংখ্যাটি কত তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া হামলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থানায় যাচাই-বাছাই শেষে অন্যদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।