দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তাপের পারদ বাড়ছে। এতোদিন তা বিচ্ছিন্নভাবে দেখা গেলেও আজ বুধবার তা বৃহৎ আকারে দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় এদিন সমাবেশ ডেকেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল।
একই দিনে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আয়োজন ঘিরে রাজধানীতে এক ধরনের উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বিএনপি ও এর মিত্ররা জাতীয় প্রেসক্লাব ও পল্টন এলাকায় অন্তত পাঁচটি এবং এফডিসি গেটে আরেকটি সমাবেশ করবে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ শাখা এতোদিন পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করলেও দীর্ঘদিন পর আজ একযোগে সমাবেশ করবে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে। এতে এক লাখ মানুষ জমায়েতের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ক্ষমতাসীন দলটি।
বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে তারুণ্যের সমাবেশ কর্মসূচি পালন শেষে এবার যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশ আয়োজন করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ২৩ শর্তে এই সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে।
এই সমাবেশ থেকে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোট যুগপৎভাবে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেবে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ২টায় সমাবেশ করবে। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির সমাবেশ উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীতে মাইকিং করা হয়। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
বিএনপির জোট শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ বিকেল ৪টায় ছয়টি দলের সমন্বয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে। সংগঠনটির সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের যৌথ ঘোষণা জানানো হবে।’ আপনারা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকছেন কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা থাকছি এবং আলাদাভাবে সংবাদ সম্মেলন করছি। আমাদের ছয়টি দল মিলে গণতন্ত্র মঞ্চ। দলগুলো হলো- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জেএসডি, নাগরিক পক্ষ, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।’
এছাড়া ১২ দলীয় জোট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলন করবে। আর জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট একই সময়ে সমাবেশ করবে বিজয়নগর পানির ট্যাংক সংলগ্ন আল-রাজি কমপ্লেক্সের সামনে।
বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবীর এসব তথ্য জানান।
বিএনপির সমমনা অন্য দলগুলোর মধ্যে এলডিপি দলীয় কার্যালয়ে (এফডিসি সংলগ্ন), গণফোরাম মতিঝিলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে (নটরডেম কলেজের বিপরীতে), গণঅধিকার পরিষদ (নুর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা) জাতীয় প্রেসক্লাব, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য জাতীয় প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ৮৫/১ নয়াপল্টন মসজিদ গলি, সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাতীয় প্রেস ক্লাবে সমাবেশ করবে। এসব কর্মসূচি শুরু হবে বিকেল ৩টায়।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, নয়াপল্টনে আজকের জনসভায় বিপুল নেতা-কর্মী ও সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে এক সপ্তাহ ধরে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর, জেলা ও বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে প্রস্তুতি সভা করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সভায় জনসমাগম বাড়াতে ঢাকা মহানগর ও আশপাশের জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিশেষভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া এক দফার কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার ৬ দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) এবং লেবার পার্টির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে বিএনপি।
নয়াপল্টনে সমাবেশস্থলের আশপাশে পুলিশি নজরদারি বাড়াতে মঙ্গলবার সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। ছবি: নিউজবাংলা
তার আগে ১২ দলীয় জোট, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক হয়।
এসব বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও বরকতউল্লা বুলু উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যজোট নামে একটি মোর্চার সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়েছে।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে বিএনপি বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধএন নির্বাচন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন করে আসছে। আজকের সমাবেশ থেকে দলটি এক দফার ঘোষণায় যাচ্ছে।
অপরদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম সমাদ্দার বাপ্পি এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন জানান, আজ বিকেল ৩টায় তাদের সমাবেশ শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, এ সমাবেশে সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও যোগ দিতে বলা হয়েছে।
সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সোমবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রস্তুতি সভা করেছে। আর মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি সভা করে।
দুই বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, সমাবেশ সফল করতে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দকে ব্যাপক জনসমাবেশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, মহানগরের সব স্তরের এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীল নেতাদের নিয়ে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছে। এখন থেকে সেখানে সময় সময় নির্দেশনা ও পরামর্শ দেয়া হবে।