শান্ত সুনিবিড় ছায়াঘেরা গ্রাম শোভারামপুর। কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় গ্রামটির অবস্থান।
অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে শোভারামপুর গ্রামে চলে চরকায় সুতা তৈরির কাজ। তবে যারা এ কাজে নিয়োজিত তাদের জীবনে নেই আর্থিক স্বচ্ছলতা। একদিন সুতা কাটলে ৯০ থেকে ১০০ শত টাকা পান। কাজ না করলে টাকা নেই।
সামান্য এ উপার্জনে মানবেতর জীবনযাপন করছে গ্রামটির অন্তত ৩০টি পরিবার। যাদের অনেকে বিধবা, কেউবা বয়স্ক। গত বিশ-ত্রিশ বছরে তাদের জীবনমান উন্নয়নে অনেকেই কথা দিয়েছেন; তবে রাখেননি কেউ।
এ গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা মাজেদা বেগম। ষাটোর্ধ্ব বয়সী এ নারীর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে কয়েক বছর আগে। সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে কাটে তার দিন। অথচ তার ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক বা বিধবা ভাতার কার্ড।
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ষাটোর্ধ্ব এ নারী বললেন, ‘পাশের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কাজের জন্য তুলা দিয়ে যায়। একদিনে তিন কেজির বেশি সুতা কাটা যায় না। প্রতি কজি সুতা কাটলে ৩০ টাকা দেয়। সে হিসেবে প্রতিদিন ৯০ টাকা পাই। এ টাকা দিয়েই কোনোরকমে চাল,ডাল, তেল কিনে চলি।’
আসমা বেগমসহ গ্রামটির আরও পাঁচ-ছয় জন নারীরও অবস্থাও একইরকম। সুতা কেটে যে টাকা পান তা দিয়ে দুই কেজি চালও কিনতে পারেন না। অভাবের সংসারে কোনোরকম বেঁচে আছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন অনেকে। কার ও আবার ঘরের সামনে জায়গাই নেই। এমন পরিবেশেও চরকা নিয়ে অন্যদের উঠানে বসে সুতা কেটে চলেছেন।
স্থানীয়দের দাবি, শোভারামপুরে যারা সুতা কাটেন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে তাদের অনেকেরই অভাব কমে যেত। এ ছাড়া সরকারের দেয়া বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা পেলেও তাদের জীবনে খানিকটা স্বস্তি আসত।
হোমনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, ‘আমি তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি। সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের জন্য কিছু করা যায় কি না বিষয়টা দেখব।’