সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়কে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। সোমবার সকাল থেকে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
মহাসড়কে বাস আটকে রাখার প্রতিবাদে এবং জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদকে গ্রেপ্তারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। দাবি পূরণ না হলে পুরো সিলেট বিভাগে ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার রাতে মহাসড়কের জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত এলাকায় বাস ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহত্তর জৈন্তার ১৭ পরগণার সালিশ সমন্বয় কমিটির এক সভায় সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে বাসের অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের ছাঁটাই ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধের দাবি জানানো হয়।
শনিবার জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদের নেতৃত্বে স্থানীয় কয়েকজন মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে চলমান বাসের চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করেন। এসময় তারা লাইসেন্সবিহীন চালকদের গাড়ি আটকে দেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রোববার রাতে সিলেট-তামাবিল সড়কে ধর্মঘটের ডাক দেয় সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। সোমবার সকালে ধর্মঘট শুরু হয়।
এদিকে ধর্মঘটের কারণে দিনভর বন্ধ ছিলো যানবাহন চলাচল। সোমবার এই সড়ক দিয়ে কোনো বাস চলেনি। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
এই সড়কের নিয়মিত বাসযাত্রী উত্তম পাল বলেন, ‘বাস ধর্মঘটের কারণে আমাকে অটোরিকশায় করে অনেকটা পথ ঘুরে ও বাড়তি ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে আসতে হয়েছে। ফেরার সময়ও একই দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’
সিলেটের অন্যতম পর্যটন স্পট জাফলংয়ে যেতে হয় সিলেট-তামাবিল সড়ক হয়ে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সোমবার জাফলংয়ে যেতে পারেননি পর্যটকরা। কুমিল্লা থেকে সিলেটে ঘুরতে আসা লায়েক আহমদ জানান, জাফলং দেখার জন্য পরিবার নিয়ে সিলেট এসেছিলেন তিনি। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে জাফলং যেতে পারেননি।
ধর্মঘটের বিষয়ে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল হক জানান, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল করা বাস ও মিনিবাস জৈন্তাপুরের দরবস্তে অবৈধভাবে আটকে রাখেন। এর জের ধরে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জৈন্তাপুর থানায় তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি পূরণ না হলে পুরো সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হবে। মঙ্গলবার বৈঠক করে এ ব্যাপারে ঘোষণা দেয়া হবে।’
অভিযোগের ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, ‘অদক্ষ ও অবৈধ চালকদের কারণে এই সড়কে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। শুক্রবার দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হওয়ার পর বাসের অদক্ষ ও অবৈধ চালকদের ছাঁটাইয়ের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। এই যৌক্তিক দাবিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকেছে।’
জৈন্তাপুর থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, ‘বাস চলাচলে বাধা দেয়ার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ এখনও পাইনি। তবে দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটা মামলা করেছে।’