বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় আবর্জনার গন্ধে টেকা দায়

দিনাজপুরের সিভিল সার্জন বোরহান-উল ইসলাম বলেন, ‘ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধের কারণে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য চরমভাবে হুমকিতে রয়েছে। পাশাপাশি যেখানে ময়লার ভাগাড় থাকে, সেই জায়গার ময়লা থেকে এক প্রকার মিথেন গ্যাস বের হয়, যা আমাদের পৃথিবীর ওজোন স্তরকে ছিদ্র করে দেয়। ফলে তাপপ্রবাহের মতো ঘটনা ঘটে।’

১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯০ সালে দিনাজপুর পৌরসভাকে ‘ক’ র্অথাৎ প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় রূপান্তর করা হয়। এর পরের ৩৩ বছরেও আবর্জনা শোধনাগার নির্মাণ না হওয়ায় প্রতিনিয়ত বর্জ্যের তীব্র দুর্গন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে পৌরসভার বাসিন্দাদের।

দিনাজপুর পৌরসভার একমাত্র ময়লার ভাগাড় (স্থানীয়ভাবে গাড্ডা হিসেবে পরিচিত) থেকে ছড়ানো দুর্গন্ধের মধ্য দিয়েই চলাচল করতে হয় হাজারো মানুষকে। এ দুর্গন্ধের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।

দিনাজপুর শহরের মাতাসাগর মোড়ের ভাগাড়ে গিয়ে দেখা যায়, এটি আবর্জনায় ভরে গেছে। দিনাজপুর পৌরসভার ময়লা পরিবহনের গাড়ি সারা দিন শহরের আর্বজনা নিয়ে এসে এখানে ফেলে। এমনকি দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালসহ অর্ধশত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের বর্জ্যও এখানে ফেলা হচ্ছে।

দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন প্রাণীর মরদেহও ভাগাড়ে ফেলা হয়। এসব আবর্জনা ও পানি মাটির নিচে যাওয়ায় আশপাশের টিউবওয়েলে দুর্গন্ধযুক্ত পানি উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা অবিলম্বে আবর্জনা শোধনাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

মাতাসাগর এলাকার বাসিন্দা আশরাফ আলী বলেন, ‘ময়লার গাড্ডারের দুর্গন্ধের কারণে আমরা বাড়িতে ঠিকমতো থাকতে পারি না। এমনকি মসজিদে নামাজও ঠিকমতো পড়তে পারি না।

‘আমরা পৌরসভার কাছে এখানে ময়লা না ফেলার জন্য বহুবার বলেছি, কিন্তু পৌরসভা আমাদের কোনো কথা শোনে না। আমরা এখানে বসবাস করতে পারছি না।’

অপর বাসিন্দা চাঁন মিয়া বলেন, ‘আমরা সাত থেকে আট বছর ধরে ময়লা ও দুর্গন্ধের মধ্যে বসবাস করছি। ময়লা না ফেলার জন্য আমরা ইতোপূর্বে পৌরসভায় আবেদন করেছিলাম, কিন্তু ময়লা ফেলা বন্ধ তো হয়নি, উল্টো ময়লা ফেলার পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে।’

মেডিক্যালের বর্জ্য বহনকারী কার্ভার্ড ভ্যানের চালক শাহজাহান আলী বলেন, ‘মেডিক্যালের বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলা নিষেধ, কিন্তু পৌরসভার আর কোনো জায়গা না থাকায় এখানে ফেলি।’

কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইনস্ট্রাক্টর (ইলেকট্রিক্যাল) খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক সময় দুর্গন্ধের কারণে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। বেশি করে বর্ষার সময় ময়লার দুর্গন্ধ এতটাই বেড়ে যায় যে, আমরাও থাকতে পারি না।’

শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে ময়লার গাড্ডাটি অন্য কোনো স্থানে নিয়ে যাওয়া বা ময়লা শোধনাগার করার দাবি জানান তিনি।

অধ্যক্ষ মাসুদ রানা বলেন, ‘কারিগারির ওয়ালের পাশেই ময়লা গাড্ডা। পৌরসভা প্রতিনিয়ত এখানে ময়লার পাশাপাশি মেডিক্যালের বর্জ্য ফেলছে। ফলে আমাদের ক্লাস নিতে সমস্যা হচ্ছে।

‘গাড্ডার দিক দিয়ে বাতাস এলে কারিগরিতে থাকা যায় না। ময়লার দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমি অনুরোধ জানাব।’

দিনাজপুরের সিভিল সার্জন বোরহান-উল ইসলাম বলেন, ‘ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধের কারণে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য চরমভাবে হুমকিতে রয়েছে। পাশাপাশি যেখানে ময়লার ভাগাড় থাকে, সেই জায়গার ময়লা থেকে এক প্রকার মিথেন গ্যাস বের হয়, যা আমাদের পৃথিবীর ওজোন স্তরকে ছিদ্র করে দেয়। ফলে তাপপ্রবাহের মতো ঘটনা ঘটে।’

দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নিয়েছি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ময়লা শোধনাগার নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর