খরস্রোতা ধলাই নদীর উৎপত্তি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায়। ভাটিতে এটি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে দীর্ঘ ৫৭ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়ে মনু নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। খরস্রোতা নদী বলে বৃষ্টি আর ঢলের পানিতে নদী ভরে প্রতি বছরই প্রতিরক্ষা বাঁধে ব্যাপক ভাঙন সৃষ্টি করে।
ধলাই নদীর স্রোতে কমলগঞ্জ পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়ন এলাকার ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের মাটি ধসে ৩১টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢল নামলে যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এসব এলাকার বাসিন্দারা প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।
শনিবার কমলগঞ্জ পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নের ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার আলেপুর, দক্ষিণ ও উত্তর কুমড়াকাপন, রামপাশা, গোপালনগর ও করিমপুর গ্রাম এলাকার বাঁধ ধসে সরু হয়ে গেছে। ইসলামপুর ইউনিয়নের মখাবিল, কুরমা চেকপোস্ট সংলগ্ন হইরোবিল শ্রীপুর ও শ্রীপুর কোনাগাঁও এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ ধসে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
তিন দিন আগে রাতের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কমলগঞ্জে ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে। এতে কমলগঞ্জ পৌরসভা ও আদমপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়ে। এসব গ্রামের আড়াই শ’ পরিবার একদিনের জন্য পানিবন্দি ছিলেন।
আদমপুর ইউনিয়নের বনগাঁও, হকতিয়ারখলা, দক্ষিণ তিলকপুর ও ঘোড়ামারা গ্রাম এলাকার ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে সরু হয়ে গেছে। মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা, হীরামতি, শিমুলতলা, শুকুর উল্যারগাঁও ও ধলাইরপার এলাকার বাঁধ ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে।
কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের জামিরাকোণা, রামপুর, নারায়ণপুর ও চৈতন্যগঞ্জ গ্রামের প্রতিরক্ষা বাঁধ অনেকটাই ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
মুন্সীবাজার ইউনিয়নের কুশালপুর, উবাহাটা, বাদে করিমপুর, সুরানন্দপুর ও বাসুদেবপুর গ্রামের ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধেরও একই অবস্থা। এর মাঝে সুরানন্দপুর গ্রামের নওশাদ মিয়ার বাড়ির সামনে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধে নতুন করে মেরামত কাজ হলেও প্রায় ২০০ ফুট এলাকার মাটি ধসে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
রহিমপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর, লক্ষ্মীপুর ও জশমতপুর এলাকার ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।
এসব এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের মেরামত কাজ ও ধলাই নদীতে খনন কাজ করলেও কাজে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরাও এই অনিয়মের কথা বলেন।
ইসলামপুর ইউপির চেয়ারম্যান সুলেমান মিয়া, আদমপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন, মাধবপুর ইউপির চেয়ারম্যান আসিদ আলী, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ, মুন্সীবাজার ইউপির চেয়ারম্যান নাহিদ আহমদ তরফদার, রহিমপুর ইউপির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল সুনির্দিষ্টভাবে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধে ৩১টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি করেন। তারা জানান, বিষয়টি উপজেলা পরিষদে বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীকেও তা অবহিত করা হয়েছে।
তারা বলেন, ‘আগামীতে আরও ভারী বৃষ্টিপাত হলে এবং ধলাই নদীতে উজানের পাহাড়ি ঢলের পানি নামলে এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ভেঙে পানি প্রবেশ করে ফসলি জমি ও বাড়িঘর নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পর্যবেক্ষক সাকিব হোসেন স্বীকার করেন যে কমলগঞ্জ ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ। একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের হিসাবে ৩১টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ ইকবালের নেতৃত্বে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ সার্বিকভাবে নজরদারিসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামতের চেষ্টা চলছে।’
কমলগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমলগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রেজুওয়ান প্রতিরক্ষা বাঁধের অনেক স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামতের চেষ্টা করা হবে।’