ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্যকে (এমপি) পাওয়া যায় না মন্তব্য করে এ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ. আরাফাত বলেছেন, তাকে পাওয়া যাবে।
গুলশানের লেকপাড়ে শনিবার সকালে জগার্স সোসাইটি প্রাঙ্গনে গণসংযোগে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা-১৭ আসনের প্রয়াত এমপি চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের কথা স্মরণ করে আরাফাত বলেন, ‘ফারুক সাহেব অসুস্থ ছিলেন। আগের জনের নামই নাকি কেউ জানত না, তবে এটুকু আপনাদের নিশ্চিত করতে পারি, আমাকে পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকার বাইরেও একই অভিযোগ হতাশার কথা হচ্ছে, যারা এখানে এমপি হয়েছেন, তাদেরকে কেউ পায় না। অন্য এলাকার লোকজন বলে গুলশান-বনানীর লোকজন তো খুবই সহজে এমপিকে পায়। শুনলাম এখানেও নাকি এমপিকে পাওয়া যায় না।’
উপস্থিত ভোটারদের উদ্দেশে আরাফাত বলেন, ‘আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আপনারা এত ব্যস্ত সময়ের মধ্য থেকে সময় বের করে আজকে এসেছেন। আমি খুবই কৃতজ্ঞ। আমি নিজেও এখানে থাকি।
‘এই পার্ক থেকে হাঁটা পথের দূরত্বে আমার বাসা। এই এলাকার সমস্যাগুলো অধিবাসী হিসেবে আমারও সমস্যা। এই সমস্যা সমাধান হলে আমি নিজেও সরাসরি উপকারভোগী হব।’
পার্ক সংস্কারে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বিষয়ে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে কাজ করবেন বলে জানান মোহাম্মাদ এ. আরাফাত।
তিনি বলেন, ‘বাকি বিষয় আপনারা নিজেরাই অর্থায়ন করবেন, যার ফলে আর সমস্যা নাই।
‘এটা নিশ্চিত থাকেন যে, আমি প্রথম দিন থেকে ফোকাস করে এই কাজগুলো করার চেষ্টা করব। আমি এটা করব।’
গুলশান-বনানী-বারিধারার বাইরে আরও অনেক এলাকা ঢাকা-১৭ আসনের অধীনে রয়েছে জানিয়ে নৌকার প্রার্থী বলেন, ‘সেখানে আমি গিয়েছি। মানিকদী, মাটিকাটা, ভাষানটেক, আদর্শনগর, বস্তি এলাকাগুলো আছে।
‘বিভিন্ন এলাকার সমস্যা ভিন্ন ভিন্ন। এলাকার সমস্যাগুলো আমি লিস্ট করছি। সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করার জন্য হোম ওয়ার্ক করছি।’
ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের যে সমস্যা, সেগুলো নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে শক্তভাবে দরকষাকষি করতে পারব। এটা আমি পারব।’
আগামী ১৭ জুলাই এ আসনে উপনির্বাচন হবে জানিয়ে মোহাম্মদ এ. আরাফাত বলেন, ‘ভোট চাওয়ার ব্যাপার। ভোট দেয়ার ব্যাপার। একই সঙ্গে আমার উদ্দেশ্য থাকে যারা ভোটার, তার ভোট চাইতে তার সমস্যার কথাটা আগে শুনব। শুনে মাথায় ঢোকাই, তারপর ভোট চাই। বেহায়ার মতন ভোট চাওয়ার আগে সমস্যার কথাটা আগে শুনি।’
এই উপনির্বাচনটা পাঁচ মাসের জন্য জানিয়ে এই প্রার্থী বলেন, ‘আপনারা যদি চান, আপনাদের দোয়া থাকে, পাঁচ মাস কেন, পাঁচ বছর যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ টেনে আরাফাত বলেন, ‘তিনি আমাকে বলেছেন ঢাকা-১৭ আসনের ব্যাপারে উনার একই চিন্তা। এখানে গুলশান-বনানী-বারিধারা অভিজাত এলাকা যেমন আছে, বাংলাদেশের নেতারা এখানে থাকে। ব্যবসায়ী, পেশাজীবী নেতাদের বসবাস এখানে। ডিপ্লোম্যাটিক জোন।
‘সব মিলিয়ে এই জায়গার গুরুত্ব আছে। পাশাপাশি যে এলাকাগুলো অভিজাত নয়, সেগুলো বঞ্চিত হয়েছে। উনি (প্রধানমন্ত্রী) কিন্তু একটা দায়িত্ব দিয়েছেন। যতটা না মনোনয়ন তার চেয়ে বেশি দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্বটা ঘাড়ে নিয়ে নিয়েছি। যদিও স্বল্প সময়ের নির্বাচন, কিন্তু আমরা খুবই গুরুত্ব দিচ্ছি ভোটার টার্ন আউটের জন্য।’
সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে যাওয়া। ভোটটা দেয়া। মাত্র পাঁচ মাসের নির্বাচন।
‘নৌকা তো জিতেই যাবে। আমি না গেলে কী হবে? অন্যজন যাবে। আশেপাশে সবাইকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন।’
রাজনৈতিক গণসংযোগ হিসেবে গুলশান জগার্স সোসাইটির প্ল্যাটফর্মকে বেছে নেয়ায় নৌকার প্রার্থী মোহাম্মাদ এ. আরাফাত ও আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ জানান গুলশান জগার্স সোসাইটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, ‘আরাফাত ভাই আমাদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। নিকটতম প্রতিবেশী। গুলশান পার্কের পাশেই তার বাসা। তাকে আমরা জিতিয়ে আনব না কেন?
‘আমাদের প্রতিবেশীকে কেন জিতিয়ে আনব না? এটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আগামী পাঁচ বছরের জন্য যে নির্বাচন হবে, সেখানেও (তাকে) আমরা দেখতে পাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘গুলশান পার্কের মাটি পরীক্ষা করতে দেয়া হয় নাই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনে আরাফাত ভাই স্ট্রংলি ভূমিকা নেবেন। পার্কটা যাতে আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তুলতে পারি, সেখানে সহযোগিতা করবেন।’
গত ১৫ মে চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যু হলে ঢাকা-১৭ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়।
তফসিল অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ হবে ১৭ জুলাই। ওই দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যালট পেপারে ভোট নেয়া হবে। পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা।