মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীর ভাঙন-প্রবণ এলাকায় গত পাঁচ দশক ধরে অসংখ্যবার বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তার বাস্তবায়ন অধরাই থেকে গেছে। পঞ্চাশ বছর পরও তাই ভাঙন-আতংকে নির্ঘুম রাত কাটছে মেঘনা পাড়ের বড় কালীপুরা ও তনু সরকারকান্দি গ্রামের কয়েকশ’ পরিবারের।
মেঘনা নদী তীরবর্তী ইমামপুর ইউনিয়নের বড় কালীপুরা ও তনু সরকারকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বড় কালীপুরা পুরাতন জামে মসজিদসহ গ্রাম দুটির অন্তত ৭২টি পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা আগেভাগে নিজের শেষ সম্বলটুকু অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
গত কয়েক বছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অনেক স্থাপনা। বছরের পর বছর বিভিন্ন সরকারের আমলে জনপ্রতিনিধিরা শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেও তা পূরণ না করায় হতাশ এ এলাকার জনগণ।
ভাঙতে ভাঙতে ঘরের পেছেনে এসে নিঃশ্বাস ফেলছে মেঘনা। ছবি: নিউজবাংলা
বৃহস্পতিবার ভাঙনের ভয়ে অন্যত্র ঘর সরাতে ব্যস্ত ছিলেন বড় কালীপুরা গ্রামের মোজাফফর আলী। কাজ থামিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে ভাঙন কম থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে নদীতে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
‘আমার বাড়িটিও ভাঙন-প্রবণ এলাকায়। নদীতে ঢেউ বাড়লে রাতে আর ঘুম আসে না। সারাক্ষণ মনে হয়, এই বুঝি বাড়িঘরসুদ্ধ নদীতে চলে গেলাম। তাই আগেভাগেই ঘরগুলো সরিয়ে নিচ্ছি।’
মোজাফফর আলীর মতো অন্তত পাঁচটি পরিবার এবছর বছর তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রাণী বেগম বলেন, ‘সব সরকারের আমলে মন্ত্রী-এমপিরা আসলো, আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেল, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। দিন দিন আমাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। প্রতিবছরই সামান্য কিছু ত্রাণ সহায়তা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন তারা (প্রশাসন)।’
ভাঙনের বিষয়ে একটা স্থায়ী প্রতিকার চান রানী বেগম।
সামর্থ্যের অভাবে নতুন জায়গা কিনে সেখানে গিয়ে বসবাস সম্ভব নয় অনেকের। তাই ঝুঁকি নিয়েই ঘুমাতে হচ্ছে একপ্রকার নদীর মধ্যে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে কোনোরকমে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা। ছবি: নিউজবাংলা
হতাশ কণ্ঠে স্থানীয় কৃষক রুপু মিয়া বলেন, ‘গ্রামটির অধিকাংশ মানুষ কৃষক, নাহয় জেলে। সামর্থ্য থাকলে আমরা অনেক আগেই এখান থেকে চলে যেতাম। মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই দেখে বাধ্য হয়ে এখানে থাকছি।
‘এভাবে আর কতদিন? সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় এই বুঝি আমার বাড়িটি ভেঙে পড়ল। বাসায় ছোট ছোট বাচ্চা সাঁতার জানে না; সবসময় চোখে চোখে রাখতে হয়। এভাবে আর কতদিন?’
এ বিষয়ে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। তবে সরোজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আমি জানাব; দেখি কতদূর কী করা যায়।’
মুন্সীগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘গজারিয়া উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী গ্রামগুলোর মধ্যে ইসমানীরচর এলাকার নদীতীর রক্ষায় একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারও নিযুক্ত করা হয়েছে। দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’
নদীর বড় কালীপুরা অংশে আপাতত কিছু করা যাচ্ছে না জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভাঙন তীব্র হলে সেখানে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে।’