গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনায় সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে মনে করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে একইসঙ্গে এই সংশোধনীর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) যে সংশোধনী পাস করা হয়েছে তাতে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমেছে। আমরা এ ধরনের উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে নির্বাচনে অনিয়ম ও বলপ্রয়োগের মতো ঘটনায় কোনো কেন্দ্র বা আসনের ভোট বন্ধ করাসহ তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন স্থগিত ও ফল বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, আরপিওতে এই সংশোধনীর ফলে নির্বাচন কমিশন শুধু ভোটের দিন কোনো অনিয়মের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করতে পারবে; ভোটের দিন ব্যতীত অন্য কোনো সময় নির্বাচন বা ফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না।
সুজন মনে করে, এমনিতেই নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠনের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। আরপিও’র এই সংশোধনী নির্বাচন কমিশনকে আরও আস্থার সংকটে ফেলবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে কমিশনকে ক্ষমতাহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে।
এছাড়া সব দলের অংশগ্রহণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে কি না, তা নিয়ে আমরা যখন সংকটে নিমজ্জিত, তখন এ ধরনের একটি উদ্যোগ সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে, যা কোনো সচেতন নাগরিকের কাম্য নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে নির্বাচন কমিশন থেকেই ভোটের ফল স্থগিত বা বাতিল করার বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য একটি উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। অথচ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর ৯১ (ক) ধারায় বলা ছিল ‘কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সঙ্গত ও আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তা হলে যে কোনো ভোট কেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।’
৯১ (কক) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ভোটকেন্দ্র বা সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকার ফল প্রকাশ স্থগিত করতে পারবে, যদি কমিশন নিশ্চিত হয় যে সেই ভোট কেন্দ্র বা পুরো নির্বাচনী এলাকার ফল বলপ্রয়োগ, হুমকি, কারসাজি বা অন্য কোনো অসদাচরণ দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সময়ের মধ্যে দ্রুত তদন্ত শেষে সরকারি গেজেটে পুরো নির্বাচনী এলাকার ফল প্রকাশের নির্দেশনা দেবে অথবা নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রের বা পুরো নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন বাতিলপূর্বক নতুন করে নির্বাচন করতে পারবে।
‘এছাড়া উচ্চ আদালতের রায়েও গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত নির্বাচনী ফল বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে বোধগম্য নয় যে, উল্লিখিত ধারা দুটিসহ উচ্চ আদালতের রায় থাকার পরও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কেন এই সংশোধনী প্রস্তাব দেয়া হলো। এটা কি কোনো পাতানো খেলা?’
সুজনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আরও একটি বিষয়ে সংশোধনীর দিকে আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। বিষয়টি হলো- আগে মনোনয়নপত্র দাখিলের ন্যূনতম সাত দিন আগে ক্ষুদ্রঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের বিধান থাকলেও এখন মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত তা পরিশোধের বিধান করা হয়েছে। বিষয়টি মোটেও ইতিবাচক নয়। কেননা এতে ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত হবে।’
সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব উল্লেখ করে সুজন আরও বলেছে, ‘এ দায়িত্ব পালন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে আইনি দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা হ্রাস করা সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে বলে আমরা মনে করি।’