নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পর আগের মতো উন্নয়ন অংশীদারগণ বেশি শর্ত দেয় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার ঢাকা সেনানিবাসে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে যারা মনে করত আমরা শুধু হাত পেতে চলব, এখন তারা আর সেটা মনে করে না। এখন আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থ ধার নেই এবং সুদসহ তা ফেরত দেই; হাত পাতি না। আগে ভাবনাটা এমন ছিল যে আমরা ভিক্ষা নিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। আমাদের একটা বদনাম দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। ঘোষণা দিয়েছিলাম, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি।’
আগামী দিনেও বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলছি যেন কারও মুখাপেক্ষী হতে না হয়।’
পিজিআর সদস্যদের প্রশংসা করে অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তাদের সাহসিকতা, সততা, আন্তরিকতা, পেশাগত দক্ষতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা আমাকে মুগ্ধ করে।’
বাহিনীর সুনাম ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে পিজিআর সদস্যদের তিনি বলেন, দেশপ্রেম এবং এই সততা নিয়েই আপনারা কাজ করে যাবেন, অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।’
সশন্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যাতে উন্নত হয় তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। আমার সবসময় এটাই লক্ষ্য ছিল, প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে গড়ে তুলব।
‘শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কাজ করে, পুলিশ বাহিনী কাজ করে। তারাও যেন অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, সমান তালে চলতে পারে, কোনোভাবেই যেন পিছিয়ে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই।’
প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা সব সময় প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরাও প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দেই।’
বিগত বছরগুলোতে সরকারের নেয়া নানা উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, আপনারা জানেন ২০০৬ সালে আমাদের বাজেট ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। এবারে আমরা বাজেট দিয়েছি ৭ লক্ষ ৬১ হাজার হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এটি দেয়ার মতো সক্ষমতা ইতোমধ্যে আমরা অর্জন করেছি। সেটাই আমরা যথাযথভাবে কার্যকর করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখব।’
এসময় বৈশ্বিক সংকটের কথা তুলে ধরে সবাইকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করে সংকট মোকাবেলার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেব।’
২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ কামাল।
অনুষ্ঠানস্থল ঘুরে ঘুরে প্রধানমন্ত্রী পিজিআর সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে পিজিআরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন তিনি। এসময় দায়িত্বপালনকালে বিভিন্ন সময় নিহত পিজিআর সদস্যদের পরিবার ও আহত সদস্যদের হাতে উপহার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম প্রমুখ।