বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্বাচন বন্ধে ইসির ক্ষমতা কমিয়ে বিল পাস

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ৪ জুলাই, ২০২৩ ২৩:১২

সংসদে বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপার সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলে যে কোনো নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। আরপিও সংশোধনী বিল পাসের মাধ্যমে সেই অধিকার খর্ব করা হলো। ইসি এখন সেন্টারগুলো বন্ধ করতে পারবে, কিন্তু পুরো নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না। এটা হলে এই ইসি দিয়ে আমরা কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন করাবো।’

ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা কমিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সদস্যদের আপত্তির মুখে মঙ্গলবার বিলটি পাস হয়।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অবশ্য সংসদে দাবি করেছেন, এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি।

সংসদে বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপার সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এই আইনের সংশোধনী। কিন্তু আরপিরও মধ্যে কতগুলো ক্লজ লাগানো হয়েছে, যার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে।

‘নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলে যে কোনো নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। আরপিও সংশোধনী বিল পাসের মাধ্যমে সেই অধিকার খর্ব করা হলো। ইসি এখন সেন্টারগুলো বন্ধ করতে পারবে, কিন্তু পুরো নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না। এটা হলে এই ইসি দিয়ে আমরা কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন করাবো।’

ফখরুল ইমাম বলেন, ‘আইনে ইলেকশনের স্থলে পোলিং শব্দটি এনে বড় পার্থক্য করা হয়েছে। আগের দিন পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের বিধানের মাধ্যমে আমরা ঋণখেলাপিকে নির্বাচনে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এই আইনে যেটা হচ্ছে তাতে বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং এই কমিশন দিয়ে নির্বাচন করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না।’

গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে আইনটি সংশোধনের উদ্দেশ্য মহৎ। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দেশে আইন হয় ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সরকারের স্বার্থে। নির্বাচনের আগে এমন আইন করা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচন ব্যবস্থা এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যে মানুষ এখন ভোটবিমুখ। যারা সরকার উৎখাতে আন্দোলন করছে তারাও এর জন্য কম দায়ী নয়। তারা এক কোটির বেশি ভুয়া ভোটার করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তার সবই প্রশ্নবিদ্ধ। এ ধরনের নির্বাচন বাংলার মানুষ আর চায় না। মানুষ চায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।’

মোকাব্বির খান বলেন, “কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন- ‘আমরা যদি ভোট চোর হই, তাহলে বিএনপি ভোট ডাকাত।’ চরম সত্যটা স্বীকার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। জনগণ ভোট চোর বা ভোট ডাকাতদের খেলার দর্শক হিসেবে আর দেখতে চায় না। জনগণ ভোট চোরকেও চায় না, ভোট ডাকাতদেরও চায় না। এ ধরনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগও শুনতে চায় না। জনগণ চায় তার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন ও প্রতিফলন। সেখানে সে নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।”

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও বাস্তবে প্রতিটি দলীয় সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করে চলেছে। বর্তমান কমিশন সর্বকালের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।’

জাপার সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনেই সুষ্ঠু ভোট করা সম্ভব। ইসির মানসিকতার ওপর নির্ভর করে নির্বাচন। সোজা বাংলায় তাদের মেরুদণ্ড শক্ত কি-না। শত আইন করে দিলেও মেরুদণ্ডহীন লোকদের দিয়ে কিছু হবে না।’

একই দলের সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘এই আইনে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এটি ঠিক হয়নি। নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এসেও নির্বাচন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হয়নি।’

বিরোধী দলের সদস্যদের এমন সমালোচনার জবাবে আইনমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘একটি আসনে ১০০/১৪০টি পোলিং সেন্টার থাকে। সেখানে বলা ছিল- ৩/৪টি পোলিং সেন্টারে কোনো সহিংসতা বা অনিয়ম হলে সব পোলিং সেন্টারের ইলেকশন বন্ধ করে দিতে পারবে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সেটা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। জনগণের ভোটাধিকারেরও পরিপন্থী। কারণ বাকিগুলোতে তো কোনো সহিংসতা বা অনিয়ম হয়নি।

‘এজন্য বলা হয়েছে, যেখানে সহিংসতা বা অনিয়ম হয়েছে সেগুলো বন্ধ হবে। আমি বুঝতে পারলাম না কেন ওনারা বলছেন যে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। ওনাদের এই কথাটা অমূলক।’

আনিসুল হক বলেন, ‘যে সংশোধনী নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে সেটা ১৯৭২-এর আরপিওতে ছিল না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন এই সংশোধনীর প্রস্তাবটি করেছিল। কিন্তু মন্ত্রিসভায় যখন এটা যায় তখন গণতন্ত্র পরিপন্থী সেই জায়গাটি সংশোধন করা হয়েছে।’

আইনমন্ত্রী দাবি করেন, ‘ঋণখেলাপি ব্যাংকে যেন টাকা ফেরত আসে এবং অর্থঋণ আদালতের উদ্দেশ্য যেন প্রতিপালিত হয় তার জন্য এটা করা হয়েছে।’

আরপিওতে যেসব সংশোধনী এসেছে

বর্তমান আরপিও অনুযায়ী, অনিয়ম বা বিরাজমান বিভিন্ন অপকর্মের কারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যদি মনে করে তারা আইনানুগ নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না, তাহলে নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে ইসি। সংশোধনীতে এই ক্ষমতা সীমিত করে ইসিকে শুধু ভোটের দিন সংসদীয় আসনের (অনিয়মের কারণে) ভোট বন্ধ করতে পারার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

আরপিওর সংশোধনী অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণা করে ফেলার পর কোনো আসনের পুরো ফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আসবে, শুধু সেসব (এক বা একাধিক) ভোটকেন্দ্রের ফল স্থগিত করতে পারবে। এরপর তদন্তসাপেক্ষে ফল বাতিল করে ওইসব কেন্দ্রে নতুন নির্বাচন দিতে পারবে ইসি।

সংবিধান অনুযায়ী, আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন আভাস দিয়েছে, আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারি মাসের শুরুতে সংসদ নির্বাচন হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১(এ) ধারায় বলা আছে, নির্বাচন কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন, চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তাহলে যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোটগ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।

অবশ্য ইসির কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, সংশোধনীতে ইসির ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতদিন আইনের এই ধারায় অস্পষ্টতা ছিল। এখন কোন কোন ক্ষেত্রে ইসি ভোট বন্ধ করতে পারবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।

এই ধারার ব্যাখ্যায় নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা এতদিন বলে আসছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ভোটের ফলের গেজেট প্রকাশ করা পর্যন্ত যেকোনো সময় ইসি ভোট বন্ধ এবং ফল বাতিল করতে পারে।

তবে ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধারায় ৯১(এ) অস্পষ্টতা আছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার পর তা ইসির কাছে পাঠানো হয়। ইসি সচিবালয় গেজেট প্রকাশ করে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণা করার পর গেজেট প্রকাশ না করে ইসি ফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে কি না, সেটি পরিষ্কার নয়। এ কারণে বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য ইসি এই বিধানের সঙ্গে আরেকটি উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিল।

ইসি প্রস্তাবে বলেছিল- কোনো অনিয়ম, জোরজবরদস্তি, ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এলে নির্বাচন কমিশন কোনো ভোটকেন্দ্র বা পুরো আসনের ভোটের ফল স্থগিত করতে পারবে। এরপর অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে কোনো ভোটকেন্দ্র বা পুরো আসনের ভোট বাতিল করে নতুন করে নির্বাচন করতে পারবে।

তবে ইসিকে পুরো আসনের ফল স্থগিত বা বাতিলের ক্ষমতা দেয়া হয়নি। আইনে বলা হয়েছে, যেসব ভোটকেন্দ্রে (এক বা একাধিক) এসব অভিযোগ থাকবে, ইসি শুধু সেসব কেন্দ্রে ভোটের ফল স্থগিত বা বাতিল করে প্রয়োজনে নতুন নির্বাচন করতে পারবে।

সংশোধনীতে আরপিওর ৯১ ধারার (এ) উপধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দের বদলে ‘পোলিং’ শব্দ প্রতিস্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘ইলেকশন’ শব্দ দিয়ে পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়া বোঝায়। অর্থাৎ তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ফল ঘোষণা পর্যন্ত সময়টা হলো ‘ইলেকশন’।

আর ‘পোলিং’ হলো শুধু ভোটের দিন। এই সংশোধনী পাস হলে নির্বাচন কমিশন অনিয়মের কারণে শুধু ভোটের দিন কোনো ভোটকেন্দ্র বা পুরো সংসদীয় আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু ‘ইলেকশন’ শব্দটি থাকলে ভোটের আগেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইসি ভোট বন্ধ করতে পারত। তাই এখানে তাদের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে। তবে আইনে ‘ইলেকশন’ শব্দটির সংজ্ঞাও পরিষ্কার নয়।

এ ছাড়া সংশোধিত আরপিওতে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা গণমাধ্যমকর্মী এবং পর্যবেক্ষকদের কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে শাস্তির আওতায় আনার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

একইসঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগের দিন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সরকারি সেবার বিল পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়েছে। আগে মনোনয়ন দেয়ার সাত দিন আগে এসব ঋণ পরিশোধ করতে হতো।

এ বিভাগের আরো খবর