শেরপুরে এবার কোরবানির জন্য ৮৫ হাজার ৫৫০টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩০ হাজার পশু অবিক্রীতই রয়ে গেছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন জেলার খামারিরা। আবার কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে অনেক খামারির এখন মাথায় হাত। তবে অবিক্রীত পশু ঈদের পরে বিভিন্ন উপলক্ষ ঘিরে বিক্রি হয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের।
শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুরে জিহান ডেইরি ফার্মের মালিক রেহানা ইদ্রিস ব্যাংক ঋণ নিয়ে দেড়শটি বড় ষাঁড় প্রস্তুত করেছিলেন কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য। প্রত্যাশা ছিল ষাঁড় বিক্রি করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করে লাভবান হবেন এ খামারি।
ভালো দাম পাওয়ার আশায় ঢাকার ভাটারায় একশ ফিট সাঈদ নগর গরুর হাট ও মিরপুর গরুর হাটে দেড়শ ষাঁড় নিয়ে যান রেহানা ইদ্রিস। দীর্ঘ ১০ দিন অপেক্ষার পর ২৭টি গরু বিক্রি করা হয়। তাও অনেকটা পানির দামে। বাকি ১২৩টি গরু ফেরত আনতে হয়। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন এই খামারি। এভাবেই জেলার অধিকাংশ খামারি ও পাইকাররা গরু বিক্রি না করে ফেরত এনেছেন।
জিহান ডেইরি ফার্মের ম্যানেজার মুকুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের মালিক ব্যাপক লোকসানে পড়ে গেছে। এবার গরুর দাম ছিল কম। আর আশানুরূপ বিক্রিও করতে পারি নাই। আমরা বিক্রির আশায় শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু ক্রেতারা গরুর দামই করে না। কম দামে ২৭টি গরু বিক্রি করে আসা যাওয়ার খরচটা তুলে এনেছি। যদি খামার মালিকরা এভাবে লোকসান খাই তাহলে আমাদের মত কর্মচারীরা কীভাবে কাজ করবে।’
একদিকে জেলায় চাহিদার চেয়ে কোরবানি হয়েছে কম। ঢাকাসহ অন্য স্থানেও পশু তেমন একটা বিক্রি হয়নি। তাই চাহিদার চেয়ে বেশি গরু জেলার কোরবানির হাটে আমদানি হওয়ায় অনেক কম দামে পশু বিক্রি করতে হয়েছে। আবার অনেকেই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে নিয়ে গেছে তাদের কোরবানির পশু।
চরশেরপুরের গরুর পাইকার হামিদ মিয়া বলেন, ‘আমি ৫টা গরু নিয়া গেছিলাম একটা গরু বিক্রি করতে পারছি। দাম কম বলে তার জন্য বাকি ৪টা ফেরত আনছি।’
কামারচরের গরু খামারি মো. হারুন বলেন, ‘আমি দুইডা গরু পালছিলাম আশা করে। ঢাকায় নিয়া তো একটাও বেচবার পাই নাই। আরও ঢাকায় আসা যাওয়ার খরচ হইলো কতগুলা টাকা। গরু কেমনে বেচমু? দাম কম বলে। খাবার দাবারের যে দাম এখন!’
বাজিতখিলার মাইনুল হোসেন বলেন, ‘শেরপুরের নওহাটা গরুর হাটে আমার একটা বড় গরু তুলছিলাম। কিন্তু দাম কম হয়েছিল, তাই বেচি নাই। ছোট ও মাঝারি গরুর দামই ভালা গেছে। এহন তো এইডারে আরও এক বছর পালতে হবো। খরচও আছে এর পিছনে।’
খোয়ারপাড়ের হযরত বলেন, ‘এবার বড় গরুর দাম একবারে কম গেছে। আমার গরুটা তিন লাখ টাকা হতো। কিন্তু শেষের দিন কম দামেই দুই লাখ টাকাতে দিয়া দিছি। এতে আমি অনেক লোকসানে পড়ে গেছি। খাবারের যে দাম। কীভাবে খামারিরা টিকবে।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার ঈদে জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ৫৬ হাজার ৪৪৯টি। আর জবাই হয়েছে মাত্র সাড়ে ৫৪ হাজার পশু। জেলায় এবার মোট ২৫টি কোরবানির হাট, ৫টি অনলাইন প্লাটফর্মে কোরবানির পশু বিক্রির নানাভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছিল।
শেরপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এবার জেলায় ৩০ হাজারের ওপরে কোরবানির পশু অবিক্রীত রয়েছে। আমরা আশা করি যে অবিক্রীত পশুগুলো রয়েছে তা আমাদের সারা বছর নানা দিবস ও অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিক্রি হয়ে যাবে। আমাদের সারা বছরই মাংসের একটা চাহিদা আছে।
‘খামারিদের আমি চিন্তা না করতে বলব। খাদ্যের দাম বেশি থাকায় এবার খামারিদের লাভটা কম হয়েছে। আর তাদের বিক্রির পরিমাণটাও কম হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে খামারিদের জন্য। আমরা আশা করব পরবর্তীতে খামারিরা এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠবেন।’