বরিশালের বাকেরগঞ্জে নামে মিল থাকায় যৌতুক মামলায় তিনদিন কারাভোগ করতে হয়েছে সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার নামে মসজিদের এক ইমামকে। পুলিশের ভুলে এমনটা হয়েছে বলে দাবি সিরাজুলের।
ঈদুল আজহা উদযাপন করতে বাড়িতে এলে শুক্রবার দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার করে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ। তিনদিন কারাভোগের পর রোববার বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার ঢাকার একটি মসজিদে ইমামতি করেন। তিনি বাকেগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের মেনহাজ হাওলাদারের ছেলে।
মামলার প্রকৃত আসামি একই গ্রামের আরেক সিরাজুল ইসলাম- আদালতে নিশ্চিত হওয়ার পর রোববার বিকেল ৫টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান। ঈদের ছুটিতে আদালত বন্ধ থাকায় তাকে তিনদিন বিনাদোষে কারাভোগ করতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী ইমাম সিরাজুল বলেন, ‘আমার পিতা ও প্রকৃত আসামি সিরাজুল ইসলামের পিতার নাম ও বংশ একই। দুজনের ঠিকানাও একই গ্রাম। রোববার বেলা দেড়টার দিকে বাড়ি থেকে আমাকে গ্রেপ্তার করেন বাকেরগঞ্জ থানার এসআই মো. কিবরিয়া। পুলিশের কাছ থেকে জানতে পারি, সোনিয়া নামক এক গৃহবধুর যৌতুক মামলার আসামি আমি। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার বিকেলেই আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর স্বজনরা মামলার কাগজপত্র তোলেন। এতে দেখা যায়, আসামি সিরাজুল ইসলাম ছাড়া অন্য আসামিরা অচেনা। পরে গ্রামের মুরুব্বিরা খোঁজ নিয়ে আসল আসামি সিরাজুল ইসলামের সন্ধান পান।
‘এই সিরাজুল ইসলামের পুত্রবধূ সোনিয়া ২০১৯ সালে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অপর দুই আসামি হলেন সোনিয়ার স্বামী হাসান ও তার মামা ফারুক। এসব কাগজপত্র আদালতে দাখিলের পর আমাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।’
রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের চৌকিদার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আসল আসামি সিরাজুল ইসলাম এলাকার জামাই। গ্রামে তার পরিচিতি নেই। তিন বছর যাবত বাকেরগঞ্জ থানা থেকে আমার কাছে যৌতুক মামলার ওয়ারেন্ট আসামি সিরাজের সন্ধান চাওয়া হচ্ছিল। আমি আসামির পিতার নাম ও বংশের মিল অনুযায়ী ঢাকায় মসজিদের ইমাম সিরাজ ছাড়া অন্য কোনো সিরাজের সন্ধান এলাকাতে পাইনি।
‘শুক্রবার ইমাম সিরাজকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে আসল সিরাজের সন্ধানে নামা হয়। মামলার অপর আসামি ফারুকের সন্ধান পাওয়ার পর তিনি স্বীকার করেন, তার ভগ্নিপতি সিরাজুল ইসলামের ছেলে হাসানের স্ত্রী সোনিয়া ওই মামলাটি করেছেন। মামলার অন্য আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। একমাত্র সিরাজুল ইসলাম জামিন নেননি।’
তবে চৌকিদারের কথা অস্বীকার করেন ইমাম সিরাজকে গ্রেপ্তার করা এসআই গোলাম কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি প্রকৃত আসামি সিরাজকেই গ্রেপ্তার করেছেন। আদালত কিসের ভিত্তিতে তাকে জামিন দিয়েছেন তা আমার জানা নেই।’
বাকেরগঞ্জ থানার ওসি এস এম মাকসুদুর রহমান বলেন, “ওয়ারেন্ট অনুযায়ী সিরাজ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছেন এসআই কিবরিয়া। কিন্তু কোর্টে চালান দেয়ার পর জানা যায় আরও একজন সিরাজ আছে। পরে জামিন পেয়ে আমাকে এসে সিরাজ নামে ওই লোকটি বলেন, ‘স্যার আমি তো সেই লোক না।’ আসলে অন্য সিরাজ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’