রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর প্রথমে নবজাতক এবং পরে মায়ের মৃত্যুর বিষয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়, চিকিৎসক সংযুক্তা সাহার বক্তব্য অসত্য। তার মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
মারা যাওয়া অন্তঃসত্ত্বা মাহবুবা রহমান আঁখির ভর্তিতে সংযুক্তাকে জানানো হয়নি বলে তিনি দাবি করলেও সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, সংযুক্তা সাহার জোরপূর্বক নির্দেশ ছিল, তার অনুপস্থিতিতে তার নামেই রোগী ভর্তি নিতে হবে। আগেও তার অবর্তমানে তার নামে রোগী ভর্তি হয়েছে এবং তার মনোনীত কনসালট্যান্টরা রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন।
রোববার সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক ডা. এম এ বি সিদ্দিক ও ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এম এ কাশেম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মাহবুবা রহমান আঁখিকে ভর্তি করানোর বিষয়ে সংযুক্তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মো. জমিরের সঙ্গে রোগীর কথোপকথনের রেকর্ড এবং রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ওই রোগীর বিষয়ে ডা. সংযুক্তা সাহার মোবাইলের কললিস্ট, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের কথোপকথন ফরেনসিক টেস্ট করে রেকর্ড যাচাই করলে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।’
আঁখির অস্ত্রোপচারে জড়িত থাকায় কারাগারে যাওয়া চিকিৎসক শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানার ‘ভাষ্য’ উল্লেখ করে সেন্ট্রাল হাসপাতাল বলছে, ‘ডা. শাহজাদী জানান যে, ডা. সংযুক্তা সাহার সঙ্গে ওই রোগীর বিষয়ে মোবাইলেও কথা হয়েছে। সংযুক্তা সাহার মোবাইলটি ফরেনসিক টেস্ট করলে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।’
অন্তঃসত্ত্বা আঁখিকে গত ৯ জুন রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলা থেকে এনে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে। যদিও ওই চিকিৎসক তখন দেশের বাইরে ছিলেন। বিষয়টি রোগী বা স্বজনদের কাছ থেকে আড়াল রাখা হয়। অন্য চিকিৎসকরা তার স্বাভাবিক প্রসব করাতে ব্যর্থ হয়ে গত ১১ জুন অস্ত্রোপচার করেন। এ সময় নবজাতকের মৃত্যু হয়। পরে আঁখিরও মৃত্যু হয়। এ ঘটনার জন্য সেন্ট্রাল হাসপাতাল দুষছে ডা. সংযুক্তাকে। আর তিনি দুই দফায় প্রেস ব্রিফিং করে দুষেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
এই পাল্টাপাল্টি দোষারোপের ধারাবাহিকতায় ‘প্রাথমিক তদন্তের পর্যবেক্ষণ’ তুলে ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ডা. সংযুক্তা সাহা সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে দুবাই গিয়েছেন। গত ১০ জুন অর্থাৎ তার বিদেশ যাওয়ার পরদিন সংযুক্তা সাহার রোগীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া হয়েছে এবং এর প্রমাণও আছে।’
ডা. সংযুক্তা সাহার দুটি প্রেস ব্রিফিংই ‘অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ উল্লেখ করে সেন্ট্রাল হাসপাতাল বলছে, ‘সংযুক্তা সাহার অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। পাশাপাশি তিনি নিজের দায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। সেন্ট্রাল হাসপাতাল ডা. সংযুক্তা সাহাকে কোনো কমিশন দেয়ওনি এবং তার নিকট থেকে কমিশন নেয়ওনি। হাসপাতালের বিল কত এবং চিকিৎসকের বিল কত তা বিলে উল্লেখ থাকে। ডা. সংযুক্তা সাহার বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য। উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যে বেশ কিছু বিল যাচাইয়ের জন্য তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছে।’
সেন্ট্রাল হাসপাতালের নিয়ম-কানুন নেই বলে ডা. সংযুক্তা সাহার অভিযোগে পাল্টা প্রশ্ন করে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘তাহলে ২০০৭ সাল থেকে কীভাবে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেন? তাছাড়া বিভিন্ন ভিডিও মাধ্যমে হাসপাতালকে প্রমোট করলেন কেন? ডা. সংযুক্তা সাহা একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে বেশি সময় দেন, তাই তিনি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে চেম্বার করা বন্ধ করেছেন। সেন্ট্রালের যদি নিয়ম-কানুন না থাকে, তাহলে তিনি অন্য একটি প্রতিষ্ঠান ছেড়ে এলেন কেন? প্রকৃত অর্থে তিনি সেন্ট্রালের সার্ভিস ও সিস্টেম সম্পর্কে সব সময় সেন্ট্রাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ প্রদান ও প্রশংসা করেছেন।’
সেন্ট্রাল হাসপাতালকে দোষারোপ করে আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমনের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘তিনি নিজেই বলেছেন যে, তিনি আনুমানিক ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালের দায়িত্বরত উপ-পরিচালক ডা. মাসুদ পারভেজকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। ইয়াকুব আলী আবার বলছেন যে, সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নাকি বলেছে, ডা. সংযুক্তা সাহা আছেন। এতেই তার বক্তব্যে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।’
সেন্ট্রাল হাসপাতাল বলছে, ‘প্রকৃত বিষয় হচ্ছে যে, নরমাল ডেলিভারি এবং তার রোগীদের জন্য ডা. সংযুক্তা সাহার টিম ছিল। তার অন-কল ডাক্তার ছিল। অন-কল ডাক্তাররাই তার রোগী ডিল করতেন। সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডাক্তাররা সংযুক্তা সাহা ও তার টিমের নির্দেশনা অনুসারে দায়িত্ব পালন করেন মাত্র। আঁখিকে ডা. সংযুক্তা সাহার আন্ডারে ভর্তির বিষয়ে প্রশাসন বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।’