ভারত থেকে আমদানি করা ২২৮ টন গম প্রায় এক বছর ধরে পড়ে আছে আখাউড়া স্থলবন্দরের গুদামে। দীর্ঘ সময় পার হলেও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের খালাস না করায় গমগুলো গুদামেই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, আখাউড়া স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের গড়িমসির কারণেই নির্দিষ্ট সময়ে গমগুলো বন্দর থেকে খালাস করা যায়নি।
পোকায় ধরা এসব পচা গম নিয়ে বিপাকে পড়েছে আখাউড়া স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। ৮০ লাখ টাকা আমদানি মূল্যের এসব গমের জন্য গুদাম ভাড়া ও বিভিন্ন মাশুল বাবদ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদের পাওনা ১০ লাখ টাকার বেশি। এ ছাড়া গুদামের জায়গাটি আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত নির্মাণধীন চার লেন মহাসড়কের জন্য অধিগ্রহণ করা হচ্ছে বলে জায়গাটি খালি করার জন্যও চাপ রয়েছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ওপর।
তবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বলছে, বন্দর কর্তৃপক্ষের গড়িমসির কারণে রপ্তানিকারককেই গমের মূল্য পরিশোধ করতে পারেনি তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানির অনুমতি না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধার গম আমদানির মাধ্যমে ঝিমিয়ে পড়া আমদানি বাণিজ্যে কিছুটা গতি ফেরে। তবে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় ২০২২ সালের মে মাস থেকে সেই গম আমদানিও বন্ধ রয়েছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বন্দর দিয়ে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে গম আমদানি করেছিল, তার মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের আলম ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১১ হাজার টন গম আমদানি করে বন্দর দিয়ে। কয়েক ধাপে আমদানি করা প্রতি টন গমের মূল্য ছিল ৩২৫ থেকে ৩৫০ মার্কিন ডলার। ওই সময় চাহিদা থাকায় বন্দরে আসার পরপরই গম খালাস করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।
সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের জুনে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ত্রিপুরার সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় আটকা পড়ে গমের বেশ কিছু চালান। পরে যোগাযোগব্যবস্থা চালু হলে আগস্ট থেকে গম আসতে শুরু করে আখাউড়া স্থলবন্দরে। এর মধ্যে কিছু ছিল বৃষ্টিতে ভেজা গম। পশ্চিমবঙ্গ থেকে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভালো গমের সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া এই ২২৮ টন গম পাঠিয়েছিল আলম ট্রেডার্সের কাছে। কিন্তু ভেজা গম রেখে ভালো গমগুলো আগে খালাস করা হয় বন্দর থেকে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, ভেজা গমগুলো পরে ছাড়াতে গেলে গড়িমসি শুরু করে স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ। এখন আর এসব পচে যাওয়া গম বন্দর থেকে ছাড়াতে আগ্রহী নয় প্রতিষ্ঠানটি।
আলম ট্রেডার্সের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা দিলীপ দাসগুপ্ত বলেন, ‘ভেজা গম পাঠানোর বিষয়টি আমরা রপ্তানিকারককে জানিয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম গমগুলো কোনো একটি পশু কিংবা মৎস্য খাদ্য উৎপাদন কারখানায় দিয়ে দেব। কিন্তু কাস্টমস আমাদের ছাড় দিচ্ছি-দেব করতে করতে দেরি করে। আমরা আর নির্দিষ্ট সময়ে ভেজা গমগুলো ছাড় করাতে পারিনি। তাই রপ্তানিকারকেরও বিল পরিশোধ করা হয়নি।
‘এখন পচে নষ্ট হওয়া গম ছাড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না। এগুলো এখন আর কোনো পশু কিংবা মৎস্য খাদ্য উৎপাদন কারখানাতেও নেবে না।’
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের সঠিক ব্যাখ্যা না দিলেও আখাউড়া স্থলবন্ধর শুল্ক স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার কেফায়েত উল্লাহ মজুমদার বলেন, ‘গমের বিষয়টি নিয়ে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখেছে। আমরা গুদাম পরিদর্শন করে গমের বর্তমান অবস্থা দেখে বিধি অনুযায়ী ছাড় করা কিংবা নিলামের বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে স্থলবন্দরের গুদামের জায়গাটি আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত নির্মাণধীন চার লেন সড়কের জন্য অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। ফলে গমগুলো ছাড় করা বা নিলামের মাধ্যমে গুদাম খালি করার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্টেশন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘গমগুলোর গুণগত মান কেমন অথবা এগুলো খাওয়ার উপযোগী কি না- সেটি পরিদর্শন করে বলা যাবে। আমরা গুদাম ভাড়া ও বিভিন্ন মাশুল বাবদ ১০ লাখ টাকার বেশি পাওনা হয়েছি। কিন্তু আমদানিকারক গমগুলো নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নয়। ফলে আমাদের পাওনা টাকা আদায় করা যাচ্ছে না। বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য শুল্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে।’