বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কে এই নাহেল, কী ঘটেছিল সেদিন?

বাসার কাছেই সুরেসনেসের একটি কলেজে ভর্তি হলেও পড়াশোনায় মন ছিল না নাহেলের। পণ্য ডেলিভারির কাজ করত সে। হতে চেয়েছিল ইলেকট্রিশিয়ান। এ ছাড়া স্থানীয় রাগবি টিমেরও সদস্য ছিল সে।

পুলিশের গুলিতে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এক কিশোর নিহতের জেরে উত্তাল ফ্রান্স। পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে দেশটির বিক্ষোভ। বিভিন্ন শহরে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের অন্তত ৪৫ হাজার সদস্য।

মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে নিহত হয় নাহেল এম. নামের আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ওই কিশোর। কিন্তু কে সে, যাকে নিয়ে জ্বলছে ফ্রান্স?

ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরের খবরে বলা হয়, ১৭ বছর বয়সী নাহেল প্যারিসের পশ্চিমে নতেঁ শহরে বেড়ে ওঠে। শহরের পাবলো পিকাসো এস্টেটের উত্তর আফ্রিকার অভিবাসীদের একটি বস্তি ছিল তার আবাসস্থল।

আলজেরিয়া থেকে অভিবাসী হিসেবে ফ্রান্সে আসা তার মা মুনিয়া তাকে একা বড় করেন। তবে তার বাবার বিষয়ে জানা যায়নি।

বাসার কাছেই সুরেসনেসের একটি কলেজে ভর্তি হলেও পড়াশোনায় মন ছিল না নাহেলের। পণ্য ডেলিভারির কাজ করত সে। হতে চেয়েছিল ইলেকট্রিশিয়ান। এ ছাড়া স্থানীয় রাগবি টিমেরও সদস্য ছিল সে।

বিবিসি জানায়, পড়াশোনায় মন না থাকলেও ভদ্র ছেলে হিসেবে পাড়ায় সুনাম ছিল তার। যারা তাকে চেনে, সবার একই কথা- নাহেল খুব লক্ষ্মী ছেলে।

পুলিশও তাকে চিনত। তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই।

সেদিন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার মায়ের কপালে চুমু দিয়ে নাহেল বলে, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি, মা।’

সকাল নয়টার কিছুক্ষণ পরই খবর আসে, একটি পুলিশ চৌকি অতিক্রম করার সময় তার বুকে গুলি করা হয়েছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ছেলেটি বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোয় পুলিশের নজরে পড়ে। সে সময় তাকে থামার ইঙ্গিত দিলেও সে পুলিশ চৌকি অতিক্রমের চেষ্টা করে।

এ ঘটনায় বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা। বিলাপ করে বলছেন, ‘আমি এখন কী করব? আমার জীবনের সবকিছু দিয়ে আমি ওকে ভালোবসতাম। দশটি নয়, ওই একটি মাত্র সন্তান ছিল আমার। ও আমার জীবন ছিল।’

ফ্রান্সের সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা অলিভিয়ে ফাউ বলেছেন, ‘গাড়ি না থামানোর অপরাধে পুলিশকে কেউ হত্যার লাইসেন্স দেয়নি। প্রজাতন্ত্রের সকল শিশুর ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’

নাহেলের ঘটনায় ন্যায়বিচার চেয়ে বিক্ষোভরত এক যুবক বিবিসিকে বলেন, ‘ফ্রান্সে প্রতিদিনই পুলিশি সহিংসতা ঘটছে। আর আপনি যদি কালো ও আরব বংশোদ্ভূত হন, তাহলে তো কথাই নেই।’

তবে নাহেলের পরিবারের আইনজীবী ইয়াসিন বুজরু বলছেন, বর্ণবাদের বিষয় এটি নয়, বিষয়টি হচ্ছে ন্যায়বিচারের।

তিনি বলেন, ‘এমন একটি আইন ও বিচার ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের দেশে যা পুলিশকে সুরক্ষা দেয় এবং দেশে একটি দায়মুক্তির সংস্কৃতি তৈরি করেছে।’

ইতোমধ্যে নাহেলের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, ফ্রান্সজুড়ে দাঙ্গার মধ্যে বড় তিন শহর প্যারিস, লিওঁ ও মার্সেইর সড়কে ৪৫ হাজার পুলিশ সদস্যকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষায়িত বাহিনীর পাশাপাশি ছিল সাঁজোয়া যান ও হেলিকপ্টার।

রোববার প্রথম প্রহরে আগের চার রাতের তুলনায় পরিস্থিতি শান্ত ছিল। যদিও প্যারিসের প্রাণকেন্দ্রে কিছুটা উত্তেজনা ছিল। এ ছাড়া ভূমধ্যসাগরীয় শহর মার্সেই, নিস ও পূর্বাঞ্চলীয় শহর স্ট্রাসবুর্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে।

সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ হয় মার্সেইতে। সেখানে শনিবার রাতে বিক্ষোভকারীদের দমনে টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ার পাশাপাশি তরুণদের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জড়ো হওয়ার আহ্বানের পর প্যারিসের বিখ্যাত চ্যাম্প এলিসিস অ্যাভিনিউতে নিরাপত্তা বাড়ায় পুলিশ। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে সড়কে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে, সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের তল্লাশি চালাতে দেখা যায়।

ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, শুক্রবার রাতে ১ হাজার ৩১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় ৮৭৫ জনকে।

পুলিশ জানায়, শনিবার দেশজুড়ে গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় ২০০ জনকে।

স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ‍পাশাপাশি সন্ধ্যার পর গণপরিবহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর