ট্রলারে ওঠা নিয়ে মাঝনদীতে কথা-কাটাকাটি। এরপর তীরে আসতেই চালানো হয় তিন পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা। নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জে যুবলীগ নেতার খেয়াঘাটে ঈদের রাতে এ ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে হামলায় আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করতে গিয়ে চার পথচারীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- আশিকুর রহমান, রায়হান ও জান্নাতুল ফেরদৌস। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে কর্মরত এই তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ বলছে, হামলাকারীরা মাতাল ছিল।
পুলিশের মারধরে আহত পথচারীদের হাসপাতালে ভর্তি করার ফুটেজ। ছবি: নিউজবাংলা
প্রত্যক্ষদর্শী ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ঈদের দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে বন্দর থেকে নবীগঞ্জ খেয়াঘাট দিয়ে শীতলক্ষ্যা পার হচ্ছিলেন তিন পুলিশ সদস্য। এ সময় ট্রলারে ওঠা নিয়ে একদল যুবকের সঙ্গে মাঝনদীতে ট্রলারে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়।
এরপর ট্রলারটি তীরে আসার পর ওই তিন পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা চালানো হয়। তাদেরকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। হামলায় আহত একজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের ভর্তি করা হয় স্থানীয় হাসপাতালে।
আহত পুলিশ সদস্য রায়হান জানান, ঈদ উপলক্ষে তিন সহকর্মী মিলে তার বোনের বাড়ি ফেরাতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে হামলার শিকার হন তারা। হামলাকারীরা সংখ্যায় ১৫ জনের বেশি ছিলো। ট্রলারের মধ্যে ঘটনার সূত্রপাত।
এদিকে আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করতে যাওয়া সদর থানা পুলিশ ঘটিয়েছে আরেক কাণ্ড। হামলাকারী সন্দেহে চার পথচারীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে পুলিশ। আহত পথচারীদের নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তারা হলেন- মশিউর রহমান, তার শ্যালক জোনায়েদ আহাম্মেদ ও জুবায়ের হাসান আনন্দ এবং তাদের বাড়ির ভাড়াটে জুলে মিয়া। তাদের বাড়ি বন্দরের নবীগঞ্জের বড়বাড়ী এলাকায়।
আহত মশিউর রহমানের বোন হাসিনা রহমান শিমু বলেন, ‘চাষাঢ়ায় আমার দোকানে গরুর মাংস রাখার পর নবীগঞ্জ ঘাট দিয়ে বাড়ি ফিরছিল আমার ভাইসহ তার শ্যালকরা। ঘাটে নামার পরপরই পুলিশ তাদের মারধর করে গাড়িতে তোলে।
‘মারধরের কারণ জানতে চাইলে আমার ভাইকে হামলাকারী বলে গালমন্দ করে পুলিশ। পরে ওদের চারজনকে রক্তাক্ত জখম করে থানায় নিয়ে যায়। বিনা কারণে আমার ভাইসহ স্বজনদের মারধরের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
মশিউর রহমান বলেন, ‘রিকশা থেকে নামার সময় দেখি আহত পুলিশরা সেখান দিয়ে যাচ্ছেন। ওই সময় আমার শ্যালক জোনায়েদ লাল রঙের একটি শার্ট পরিহিত ছিলো। তাকে দেখিয়ে দিচ্ছিল আরেক পুলিশ সদস্য। এরপর জোনায়েদকে ধরে নিয়ে মারধর শুরু করে পুলিশ। আমরা সামনে গেলে আমাদেরকেও পেটাতে শুরু করে।
‘পরে জানতে পারি হামলাকারীদের মধ্যে নাকি একজন লাল রঙের শার্ট পরিহিত ছিলো। আমাদের বিনা কারণে মারধর করেছে। আমরা এর বিচার চাই। এসআই বাতেন ও বোরহান আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জে খেয়াঘাটে পুলিশের ওপর হামলার ফুটেজ। ছবি: নিউজবাংলা
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘হামলাকরীরা ছিলো মাতাল। হামলায় জড়িতদের আটক করতে অভিযান চলছে। পুলিশকে মারধরের ঘটনায় ইতোমধ্যে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলাও হয়েছে।
‘আর আহত চার পথচারীর বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি। ঘটনার পর সেখান দিয়ে যাওয়া ওই পথচারীদের মধ্যে একজনের শার্টের রঙের সঙ্গে হামলাকারীদের একজনের পরিহিত শার্টের রঙ মিলে যাওয়ায় এমনটা ঘটেছে। আর তাদেরকে মারধর করেছে আহত পুলিশ সদস্য ও লাইনের পুলিশ সদস্যরা।’
এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তাফার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল হলেও তিনি ফোন ধরেনি।