রাজশাহীর বাগমারায় ঈদের রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক স্কুলশিক্ষক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার দুই ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বাগমারা উপজেলার মাদারিগঞ্জ বাজারে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত স্কুল শিক্ষকের নাম ফরিদা ইয়াসমিন। ৫০ বছর বয়সী ফরিদা দুর্গাপুর উপজেলার শিবপুর বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিক। তার স্বামী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে বিশেষজ্ঞ এজাজুল বাশার স্বপন।
এ ঘটনায় দ্বগ্ধ হয়েছেন তাদের দুই ছেলে রাশিদুল ইসলাম ও রাফিউল বাসার। ২৬ বছর বয়সী রাশিদুল রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে এবছর এমবিবিএস সম্পন্ন করেছেন। ২০ বছরের রাফিউল একাদশ শ্রেণির ছাত্র।
তাদের দগ্ধ অবস্থায় প্রথমে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার পরিবারের সকলে মিলে পশু কোরবানি করেন তারা। রাতে খাওয়া- দাওয়া শেষে এজাজুল বাশার স্বপন রাজশাহী নগরীর বাসায় ফিরে যান। দুই ছেলেকে নিয়ে মা ফরিদা ইয়াসমিন ছিলেন গ্রামের বাড়িতে। গভীর রাতে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়ে শোবার ঘরেই দগ্ধ হয়ে মারা যান ফরিদা ইয়াসমিন।
বাগমারার গনিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, ‘উপজেলার মাদারিগঞ্জ বাজারের আশা সিনেমা হলটি কিনে নিয়ে সেখানে বসবাস করত পরিবারটি। ভবনটির নিচতলায় দোকান, দ্বিতীয় তলা একটি এনজিওকে ভাড়া দিয়ে তৃতীয় তলায় বসবাস করতেন তারা।
‘গতরাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন মারা গেছেন, ছেলেদু’টি হাসপাতালে আছে। তাদের ঢাকায় নেয়া হয়েছে।’
কীভাবে আগুন লাগলো, এ বিষয়ে কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. আফরোজা নাজনিন বলেন, ‘রাশিদুলের শরীরের ২২ ভাগ এবং রাফিউলের শরীরের ৫০ ভাগ পুড়ে গেছে। দু’জনেরই শ্বাসনালী দগ্ধ হয়েছে। দুই ভাইয়ের অবস্থায় আশঙ্কাজনক।
‘রামেক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। সকালে তাদের পরিবারের লোকজন তাদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন।’
বাগমারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মেহেদী হাসান তুহিন জানান, রাত পৌনে চারটার দিকে তারা আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। প্রায় ২ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রান্নার চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। তাদের রান্নাঘরে গ্যাস ও খড়ি দিয়ে রান্নার ব্যবস্থা আছে। সেখানেই আগুনটা বেশি লেগেছে।
‘আগুন নেভানোর সময় শোবার ঘরের মেঝে থেকে ফরিদা ইয়াসমিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুই ছেলেকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে একজন উপর থেকে লাফ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। তাকে বাড়ির পাশের গাছপালার ভেতর পড়ে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।’