রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ চলছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৬২টি ওয়ার্ডের শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মোট কোরবানির বর্জ্যের ৭০ ভাগ অপসারণ সম্পন্ন হয়েছে। ৩২টি ওয়ার্ডে শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ওয়ার্ডগুলোর কাজও শেষ পর্যায়ে।
ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন এ তথ্য জানান।
শতভাগ বর্জ্য অপসারণ হওয়া ওয়ার্ডগুলো হলো- ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১৭, ১৯, ২২, ২৩, ২৪, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৮, ৩২, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৩৯, ৩৭, ৩৮, ৪১, ও ৪২।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, ডিএসসিসিতে রাত ৭টা ৪৫টা পর্যন্ত ৩০টি ওয়ার্ড থেকে কোরবানির পশুর শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
শতভাগ বর্জ্য অপসারণ হওয়া ওয়ার্ডগুলো হলো - ১,২,৩, ৯, ১০, ১৩, ১৬, ১৮, ২১, ২৪, ২৬, ২৮, ৩০-৩২, ৩৫-৩৮, ৪১, ৪৩, ৫০-৫৩, ৫৬, ৫৭, ৬৯, ৭২ ও ৭৫।
ঈদের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই সিটিতে ১৯ হাজার ২৪৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণ শুরু করেন। বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে দুই সিটির ৫টি ওয়ার্ড থেকে কোরবানির শতভাগ পশু বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো- ১০ (১ম), ৫৩ (২য়), ৩৮ (৩য়), ৪১, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে দুই সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিতরণ করা হয়েছে আনুমানিক ১১ লাখ প্লাস্টিক ও পলিব্যাগ। খোলা হয়েছে হটলাইন।
ঈদুল আজহায় এবার ঢাকার দুই সিটিতে পাঁচ লাখ পশু কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এসব পশু থেকে কমপক্ষে ৩০ হাজার টন বর্জ্য সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবার কোরবানির পশুর বর্জ্য ৮ ঘন্টার মধ্যে অপসারণ করা হবে। আর ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নগরবাসীকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, এবার কোরবানি শুরুর ১২ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ সিটি পুরোপুরি কোরবানির বর্জ্যমুক্ত করা হবে। সে লক্ষ্যে দুই সিটি জুড়ে চলছে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম।
ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, উত্তর সিটিতে ১০ হাজার ৩১৪ জন কর্মী কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়োগ করা হয়েছে।
জবাই করা কোরবানির পশুর বর্জ্য তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ এবং কোরবানির পশুর হাট দ্রুত পরিষ্কার করতে ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পরের দুই দিন বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক/খোলা ট্রাক, ভারী যান-যন্ত্রপাতি, পানির গাড়ি, বেসরকারি এবং ভাড়ায় পিকআপভ্যানসহ ৬১৫টি গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বর্জ্য ব্যাগ, ব্লিচিং পাউডারসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত উপকরণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৯ লাখ পলিব্যাগ, বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ ১ লাখ, ব্লিচিং পাউডার ২ হাজার ৪০০ বস্তা (৬৭ টন), স্যাভলন ৯০০ ক্যান (প্রতি ক্যান ৫ লিটার), টুকরি ৭ হাজারটি, ফিনাইল ১ হাজার ৬০০ লিটার (প্রতি ক্যান ১ লিটার)।
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫ হাজার ৩০০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ৭৫টি ওয়ার্ডে নিয়োজিত প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার কর্মী এবং পশুর হাটের জন্য ৬৩০ জন বাইরের শ্রমিকসহ সর্বমোট প্রায় ৮ হাজার ৯৩০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী বর্জ্য অপসারণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
কোথাও বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখলে দক্ষিণ সিটির কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯৯০০৮৮৮ ও ০২২২৩৩৮৬০১৪ নম্বর ফোন করে অবহিত করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে কোরবানির পশুর হাট এবং জবাইয়ের পরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তদারক করতে ডিএসসিসির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদারক পরিষদ গঠন করা হয়েছে।
কোরবানির বর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ৩৫৭টি বিভিন্ন ধরনের যান-যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ ছাড়া পর্যাপ্ত হাতগাড়ি, বেলচা, কাটা ও টুকরিসহ অন্যান্য মালামাল ওয়ার্ড পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। সে সঙ্গে রাজউক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের ২৪টি ভারী যান ব্যবহার করা হচ্ছে।