ঈদযাত্রায় ঢাকা-চট্রগ্রাম ও সিলেট মহাসড়কে যাত্রীর ঢল নেমেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন লাখো মানুষ। মহাসড়কে যানজট না থাকলেও গাড়ি চলাচলে ধীরগতির কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি কমেনি।
বুধবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৬টি জেলার মানুষ এই দুই মহাসড়ক হয়ে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়ছে মহাসড়কে। তবে বাড়তি ভাড়ার পাশাপাশি বৃষ্টি যাত্রী ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার টিকিট কেটেও সময়মতো বাস না আসায় নারী ও শিশুদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মহাসড়কের পথে পথে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ৩০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে সাইনবোর্ড, শিমরাইল, কাঁচপুর, মদনপুর, কেওডালা, মোগরাপাড়াসহ মেঘনা টোল প্লাজা পর্যন্ত বিভিন্ন মোড়ে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যাত্রীদের অবস্থান দেখা গেছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন বেশিরভাগ যাত্রী। বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকাসহ অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে বাস কাউন্টারম্যানের সঙ্গে তর্কে জড়াচ্ছেন অনেকে।
একই অবস্থা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে আড়াইহাজারের পুরিন্দাবাজার পর্যন্ত। এ সড়কের যাত্রামুড়া, তারাব, বরাব, রূপসী এলাকায় দুই লেন সড়ক হওয়ায় যানবাহনের ধীরগতি রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী যাত্রী রেখা আক্তার গাড়ি না পেয়ে সাইনবোর্ড এলাকার বাস কাউন্টারে বসে আছেন প্রায় তিন ঘণ্টা। তিনি বলেন, ‘গাড়ি আসার কথা সকাল ১০টায়। কিন্তু কাউন্টার থেকে এখন জানানো হয়েছে ২টার পর বাস এখানে থামবে। বৃষ্টির মধ্যে ভিজে রাস্তায় অপেক্ষার চেয়ে কষ্ট আর আছে?’
মহাসড়কে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ বেশিরভাগ যাত্রীর। কুমিল্লার যাত্রী প্রবাসী ইমান হোসেন বলেন, ‘ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছিলাম। এখন বাড়ি যাই। রাস্তায় যানজট নেই এটা ভালো, কিন্তু সময়মতো গাড়ি আসে না।
‘অল্প রাস্তার ভাড়া নিচ্ছে তিনগুণ। কুমিল্লা যেত লাগত ১৫০ টাকা সেই ভাড়া নিচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এদিকে বৃষ্টি হচ্ছে। কাউন্টারে এতো বেশি যাত্রী যে বসার জায়গা নেই। এসব সমস্যা প্রশাসনের দেখা দরকার।’
কিশোরগঞ্জের যাত্রী ফার্মেসির মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি মায়ের সাথে ঈদ করতে। নারায়ণগঞ্জের শিবু মার্কেট এলাকার বাসা থেকে রওনা হয়েছি সকাল ১১টায়। কিন্তু দুপুর ১টা পর্যন্ত কোনো গাড়ি পাইনি। যেগুলো আসছে সেগুলোতে ভাড়া তিন গুণ চাইছে।’
সিলেটের যাত্রী ইটভাটার শ্রমিক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বউ-বাচ্চার সাথে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাই। কিন্তু যামু কেমনে সেইডা বুঝতেছি না। কারণ পাঁচশ’র ভাড়া বানাইছে ৯ শ’ টাকা। এতো টাকা ভাড়া কই পামু। তাই অপেক্ষায় আছি কম ভাড়ার বাসের।’
এদিকে যাত্রী ভোগান্তি কমাতে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিস। তিনি বলেন, ‘যারা যাত্রীদের হয়রানি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
বৃষ্টির কারণে মহাসড়কে ভোগান্তি হলেও যানজট নেই বলে জানান হাইওয়ে পুলিশ নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ঈদে রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের অঞ্চলের ২৫ লাখের বেশি মানুষ পূর্ব-দক্ষিণের বিভিন্ন জেলার দিকে যাচ্ছেন। সকাল থেকে কয়েক লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছে।
‘লক্ষাধিক যানবাহন রাজধানী ছাড়ছে। রাস্তায় গাড়ির চাপ থাকলেও কোনো ধরনের যানজট নেই। মানুষ যাতে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’