দিন পেরুলেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত আদায়ের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে উপ-মহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মিনার গোর-এ শহীদ বড় ময়দান কর্তৃপক্ষ। শেষ মুহুর্তে মাঠের শুকনো জায়গা ভেজানোর কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। আর শ্রমিকেরা ঠিক করছেন নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে মুসল্লিদের দাঁড়ানোর কাতারের দাগ। জামাতে অংশ নিতে আশেপাশের জেলা থেকে আসা মুসল্লিদের জন্য প্রথমবারের মতো দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি মাঠে মাটি ভরাট, ধোয়ামোছা, পানি ছেটানোসহ বিভিন্ন ধরনের সংস্কারমূলক কার্যক্রম চলছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওয়াচ টাওয়ার নিমার্ণ করা হয়েছে। সুপেয় পানি ও অজুখানার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্থানীদের বরাতে সূত্র জানায়, ঈদগাহ মিনার জুড়ে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদ্যসরা ছাড়াও দায়িত্ব পালনে মাঠে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা। মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ঈদগাঁহে প্রবেশের জন্য মোট ১৯টি গেট তৈরি করা হয়েছে। এসব গেটে মেটাল ডিরেক্টর দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। ঈদের জামাত অনুষ্ঠানে মোট ১১০টি মাইক ও বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসার পাঁচ শতাধিক মুকাব্বির নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়াও মুসল্লিদের অজুর সুবিধার্থে ২৫০টি অজুখানা ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
শহরের বালুবাড়ি পানি ট্যাংকি এলাকার কামরুল ইসলাম বলেন, ‘লেখাপড়ার জন্য আমি ঢাকায় থাকি। ঈদ করার জন্য দিনাজপুর এসেছি। আমাদের জেলায় এত বড় ঈদগাহ মিনার আর এত বড় ঈদ জামাত হয়, এটা আমাদের জন্য অবশ্যই গর্বের বিষয়। গোর-এ শহীদ মাঠ নিয়ে অন্যরা যখন আমাদের সামনে প্রশংসা করে তখন অনেক ভালো লাগে। বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ পড়তে আসেন, অনেকের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। আশা করি আগামীতে দেশের বাইরে থেকেও এ মাঠে অনেকে নামাজ পড়তে আসবেন।’
দিনাজপুর নিউটাউন এলাকার তারিক আজমীর বলেন, ‘এখানে একসঙ্গে লাখ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। আশেপাশের জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিা এখানে নামাজ আদায় করতে আসেন। বাইরে থাকা আসা মুসল্লিদের জন্য দুটি স্পেশাল শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা অনেক ভালো উদ্যোগ। এতে বাইরে থেকে আসা মুসল্লিরা সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। একসঙ্গে যত বেশি মানুষ নামাজ আদায় করবে, তত বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।’
মঙ্গলবার বিকেলে ঈদগাহ মাঠ সরেজমিন পরিদর্শনে যান গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি।
ইকবালুর রহিম বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল ফিতরে এ মাঠে একসঙ্গে ৬ লক্ষাধিক মানুষ নামাজ আদায় করেছিল। ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে আগত মুসল্লিদের জন্য দুটি স্পেশাল ট্রেন থাকছে যা এবারই প্রথম। বিশাল এই জামাতে দিনাজপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা যেন নামাজে অংশ নিতে পারেন এজন্য প্রচার ও নিরাপত্তার বিষয়ে বরাবরের মতো জোর দেয়া হয়েছে।’
দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামশুল হক কাশেমী ঈদুল আজহার নামাজে ইমামতি করবেন বলে জানান তিনি।
এসময় জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদসহ পুলিশ প্রশাসনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঈদ স্পেশাল দুটি ট্রেনের সময়সূচি
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে গোর-এ শহীদ বড়ময়দানগামী দু’টি স্পেশাল ট্রেন থাকছে এবার। একটি ট্রেন ঠাকুরগাঁও থেকে ছেড়ে সেতাবগঞ্জ হয়ে দিনাজপুর এবং আরেকটি পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে চিরিরবন্দর থেকে দিনাজপুর পৌঁছাবে।
ঠাকুরগাঁও থেকে আসা ট্রেনটি ঈদের দিন ভোর ৫টায় ছাড়বে। ট্রেনটি ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ, মঙ্গলপুর ও কাঞ্চন ট্রেন স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিয়ে সকাল সোয়া ৭টায় দিনাজপুর ষ্টেশনে পৌঁছাবে।
অপর ট্রেনটি পার্বতীপুর থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে মন্মথপুর, চিরিরবন্দর, কাউগাঁওয় যাত্রাবিরতি দিয়ে সকাল পৌনে ৮টায় দিনাজপুর ষ্টেশনে পৌঁছাবে।
নামাজের পর সোয়া ৯টায় পার্বতীপুরমুখি ও সাড়ে ৯টায় ঠাকুরগাঁওমুখি ট্রেনটি দিনাজপুর স্টেশন ত্যাগ করবে।