দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে তিন দিনের সফরে বাংলাদেশ আসছেন জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব আমিনা জে মোহাম্মদ।
কুটনৈতিক সূত্র জানায়, আগামী ১ জুলাই দুপুরে ঢাকা পৌঁছাবেন আমিনা জে মোহাম্মদ। বাংলাদেশ সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
সফরের প্রথম দিন বিকেলে তিনি ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও এসডিজি বিষয়ক একটি সেমিনারে অংশ নেবেন। এ দিন রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন জাতিসংঘের এ উপ-মহাসচিব।
জাতিসংঘের এ কর্মকর্তার সফরকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছে সরকার। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জাতিসংঘের উপ-মহাসচিবের সফর বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ। তার আগে জাতিসংঘের দুই আন্ডার সেক্রেটারি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়ে জাতিসংঘ বেশ ইতিবাচক।’
আমিনা জে মোহাম্মদ বাংলাদেশ সফরকালে জাতিসংঘের দেয়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০০০ সালে জাতিসংঘের দেয়া সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের সাফল্য বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম বাড়িয়েছে। এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ ভালো করবে বলে আশা করে বিশ্ব।’
২০১৫ সালে পৃথিবীকে আরও বৈষম্যহীন ও বাসযোগ্য করার লক্ষ্য সব দেশের সম্মতিতে এসডিজি গ্রহণ করা হয়। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এটি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এসডিজিতে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে– দারিদ্র্যের বিলোপ, ক্ষুধা মুক্তি, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, মানসম্মত শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানি, শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি; শিল্প, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো; অসমতার হ্রাস; টেকসই নগর ও জনপদ; পরিমিত ভোগ ও উৎপাদন; জলবায়ু কার্যক্রম; জলজ জীবন; স্থলজ জীবন; শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারত্ব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, এসব লক্ষ্য এমডিজির থেকে বেশ কঠিন ও ব্যয়সাপেক্ষ। ফলে লক্ষ্যগুলো অর্জনে উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতার কথা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বারবার বলে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু উন্নত রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে পর্যাপ্ত সাড়া পাচ্ছে না উন্নয়নশীল দেশগুলো।
এছাড়া এ লক্ষ্য অর্জনের পথে শুরুতেই বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল করোনা ভাইরাস মহামারি। এর সঙ্গে এ মুহূর্তে যোগ হয়েছে ইউক্রেন সংকট। ফলে এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশে যে স্থানে থাকার কথা ছিল, তা থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। জাতিসংঘের কাছে তাই এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সময় বাড়ানোর কথাও বলেছে বাংলাদেশ।
সূত্র জানায়, সফরের দ্বিতীয় দিন সকালে তেজগাঁওয়ে পাট বহুমুখীকরণ কেন্দ্রে যাবেন জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব। সেখান থেকে স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক করতে জাতীয় সংসদে যাবেন তিনি। এরপর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মোংলার উদ্দেশে হেলিকপ্টারযোগে রওয়ানা দেবেন। মোংলায় উলুবুনিয়া ইউনিয়নে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প ঘুরে দেখবেন। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সুবিধাভোগী মানুষের সঙ্গে আলোচনা করবেন জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব। এসময় প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কমিউনিটি ক্লিনিকও ঘুরে দেখবেন তিনি। দিনটি সেখানে কাটিয়ে আবারও সন্ধ্যায় তিনি ঢাকায় ফেরত আসবেন।
পরে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে জাতিসংঘের উপমহাসচিবের।
৩ জুলাই সকালে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে ব্রিটিশ-নাইজেরিয়ান কূটনীতিক আমিনা জে মোহাম্মদের।