সময় একেবারের শেষ পর্যায়ে চলে আসায় জমজমাট রাজশাহীর পশুর হাটগুলো। ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি। এই সময়ে রাজশাহীর সব পশুর হাটেই বেচাবিক্রি বেড়েছে। হাটে হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি ব্যাপক। তবে ক্রেতার ভিড় মূলত মাঝারি আকারের গরু ঘিরে।
রাজশাহী শহরে এবার ৯টি হাট বসেছে। এর মধ্যে স্থায়ী ৩টি আর ৬টি ঈদ উপলক্ষে বিশেষ হাট। এছাড়া প্রতিটি উপজেলাতেই রয়েছে একাধিক কোরবানির পশুর হাট। সবচেয়ে বড় রাজশাহী সিটি হাট। এখানে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন গরু মহিষ কিনতে। সেসঙ্গে রাজশাহী শহর, বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলার বাসিন্দারাও এখানে কোরবানির পশু কিনতে আসছেন।
রাজশাহী সিটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির জন্য সবাই ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরু বেশি খুঁজছেন। আর চাহিদা বেশি থাকায় বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুর দাম বেশি। তবে ছোট গরুর সরবরাহ কম। এক লাখ টাকার নিচে গরুর সংখ্যা খুবই কম। মাঝারি আকৃতির গরুগুলো এক লাখ টাকার ওপরে দাম হাঁকা হচ্ছে। আর হাটে বড় আকৃতির গরুগুলোর দাম দুই লাখের উপরে।
মঙ্গলবার রাজশাহী সিটি হাটে বিপুলসংখ্যক পশু আমদানি হয়। ছবি: নিউজবাংলা
গরুর ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার দাম অনেকটা বেশি। প্রতিটি গরুর দামই অন্তত ২০/৩০ হাজার টাকা বেশি বলছেন তারা। দাম বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতা ২/৩ দিন গিয়ে দামাদামি করে গরু কিনতে পারছেন।
বনগ্রাম এলাকার জাহিদুল ইসলাম জানালেন, একটা কোরবানির গরু কেনার জন্য তিনদিন হাটে গেছেন। দুদিনই ঘুরে আসতে হয়েছে। যেসব গরু পছন্দ হচ্ছে সেগুলোর দাম বেশি মনে হচ্ছে। আবার যেগুলো দামে মিলছে সেগুলো পছন্দ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘মাঝারি আকৃতির গরু ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৭০/৮০ হাজার টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু পছন্দ আর দামে মিলছে না। শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় একটা গরু কিনলাম। আশা করছি সাড়ে ৪ থেকে ৫ মণ মাংস হবে।’
আরেক ক্রেতা জয়নাল জানালেন, তিনি দেড় লাখের মধ্যে গরু কিনবেন। ৭জন মিলে ভাগে কোরবানি দিচ্ছেন তারা। দাম কিছুটা বেশিই মনে হচ্ছে। এজন্য তিনি আরও একটা দিন দেখতে চান। তিনি বলেন, ‘চার মণ মাংস হবে এরকম গরু ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মত দাম পড়ছে।’
এদিকে ক্রেতারা গরুর দাম বেশি বললেও বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের বক্তব্য, গরু পালন করতে যে খরচ হয়েছে সে অনুযায়ী দাম মিলছে না।
বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুটি গরু বাড়িতে লালনপালন করেছি। দুটি মিলে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারলে কয়টা টাকা লাভ হবে। কিন্তু একটার দাম ১ লাখ ৩০ হাজারের উপরে উঠছে না।
‘এই দামে ছেড়ে দিলে কোন লাভই থাকবে না। গরুর খাবারের যে দাম তাতে এগুলোর পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। শেষ দিন পর্যন্ত দেখবো। না হলে এই দামেই ছেড়ে দিতে হবে।’
রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা এলাকার গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বাজারে সব পণ্যের দামেই আগুন লেগেছে। তাহলে গরুর দাম বাড়বে না কেন? গরুকে সবকিছুই বাজার থেকে কিনে খাওয়াতে হয়। সে হিসাবে গরুর দামই ওঠে না অনেক সময়। আর খরচ হিসেবে গরুর দাম চাইলে ক্রেতারা বলছেন দাম বেশি।’
রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার ফারুক হোসেন ডাবলু বলেন, ‘এবার নানা কারণেই কোরবানির পশুর দাম বেশি। এই হাটে যেসব গরু উঠেছে সেগুলো বাড়িতে বা খামারে পালন করা। হাট দেশি জাতের গরুতেই ভরপুর। এর মধ্যে মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি।
‘তবে যেমনটা আশা করেছিলাম হাটে এখন পর্যন্ত তেমন বিক্রি নাই। গরু অনেক। কিন্তু সেই অনুযায়ী ক্রেতা নাই। দেখা যাক আজ এবং কাল মিলে কেমন কেনাবেচা হয়।’
এদিকে হাটগুলোকে ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বিজয় বসাক বলেন, ‘হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখানে পোশাকি পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ কাজ করছে। হাটে যাতে কেউ প্রতারনার শিকার না হয় সেদিকেও নজর রাখছি।
‘এখন অনলাইনে অনেকেই গরু কেনাবেচা করেন। আমরা সেজন্য আমাদের সাইবার ইউনিটকে কাজে লাগিয়েছি। জাল টাকার ব্যবহার যাতে না হয় সেদিকেও নজর রাখছি। প্রয়োজনে পুলিশি নিরাপত্তা দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর শুধু কোরবানির পশুর হাট নয়, ঈদকে ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে আরএমপি।’