কাল বাদে পরশু মুসলিম সম্প্রদায়ের বড় উৎসব ঈদুল আজহা। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। এসব হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আনা হচ্ছে গরু ও ছাগলসহ বিভিন্ন পশু। তেমনি পুরান ঢাকার একমাত্র হাটটিও বেশ জমে উঠেছে। চড়া দামে পশু বিক্রি হলেও তা কিনতে ক্রেতার যেন ঢল নেমেছে এ হাটে।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল ও ধুপখোলা মাঠ সংলগ্ন কোরবানির পশুর হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর গরু আনা হয়েছে। কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র একদিন। তাই ক্রেতা সমাগমে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। চলছে হাঁকডাক, দরদাম। নতুন ট্রেন্ড হিসেবে যোগ হয়েছে সেলফি উৎসব।
হাটে ঘুরে দেখা যায়, বড় গরুর আশপাশে ভিড় বেশি হলেও কেনার ক্ষেত্রে চাহিদা বেশি ছোট ও মাঝারি গরুর। গরুর দাম বৃদ্ধির জন্য গো-খাদ্য ও নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ী ও হাট ইজারাদাররা।
মঙ্গলবার সকালে হাটের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে দেখা গেছে, ছোট, মাঝারি ও বড় আকৃতির বাহারি গরু এসেছে হাটে। ঈদের আর বেশি সময় বাকি না থাকায় এদিন দুপুরের আগেই গরুতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে হাট।
সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে ধোলাইখাল গরুর হাটে মানুষের হাঁটার কোন পরিস্থিতিই ছিল না। বৃষ্টির কারণে বাজারে ক্রেতা কম হলেও অন্যদিনের তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
এদিকে দাম নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ক্রেতার মতে দাম বেশি আর বিক্রেতার মতে দাম কম বলছের ক্রেতারা। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরুর মূল্য এবার তুলনামূলক বেশি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বৃষ্টির কারণে সকালে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা বাড়তে থাকে।
এদিকে ধোলাইখাল রোডের যান চলাচল সীমিত আকারে চলছে। যানজট এড়ানোর জন্য চালক ও স্থানীয়রা বিকল্প পথ ব্যবহার করছেন।
পুরান ঢাকার এই হাটে ছোট গরুগুলো ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও লাখ টাকা থেকে শুরু ২-৩ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে মাঝারি সাইজের গরু। বড় গরু ৫ লাখ থেকে শুরু করে বিক্রি হচ্ছে ৮ লাখ পর্যন্ত। আর ৫-৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে ছাগল।
বাজার আসা ক্রেতারা জানান, গরুর দাম বাড়তি। তবুও কোরবানির জন্য হাট ঘুরে পছন্দের গরু কিনতে হবে। বেশ কয়েকদিন ধরে ঘুরে গরুর দাম জানা হয়ে গেছে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় গরুর কেনার তাড়া রয়েছে তাদের।
মাদারীপুর গরু নিয়ে আসা আফজাল হোসেন বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে ক্রেতারা গরুর দাম জানতে চেয়েছেন। কিন্তু আজ দর করছেন। কয়েকটি বিক্রি হয়েছে। আশা করি, আমাদের সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে।’
মুন্সিগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী নিয়াজুল কবির বলেন, ‘নগরের বাসিন্দরা আজ গরু কিনবেন। গরু রাখার জায়গা না থাকায় অনেকেই আগে গরু কিনতে চান না।’
বাজারে গরুর দাম গত বছরের তুলনায় বেশি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে গরুর দামও বেড়েছে। তবে আমাদের বিক্রি সন্তুষ্টিজনক।’
নারিন্দার বাসিন্দা আবুল ফজল শাহাবুদ্দীন বলেন, ‘গত কয়েকদিন গরু দেখেছি। গতরাতে একটি গরু পছন্দ হয়েছিল। টাকা কম থাকার কারণে ও পরিবারের ছোট সদস্যদের দেখানোর জন্য গরুটি নেয়া হয়নি। আজ গরুটি কিনলাম ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায়।’
কোরবানির হাটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানান, হাটে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখনো পর্যন্ত হাটে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
জাল টাকার বিষয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সতর্ক করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।