সোমবার অফিস শেষে শুরু হয়েছে ঈদের সরকারি ছুটি। এছাড়া গাজীপুরের ছোট-বড় ৫ সহস্রাধিক শিল্প কল-কারখানাও মঙ্গলবার থেকে ছুটি শুরু হয়েছে। ফলে সোমবার রাত থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পায়।
সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনের ধীরগতি আবার কোথাও থেমে থেমে যানজট ছিল। তবে মঙ্গলবার সকালে এই দুটি মহাসড়কে চাপ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে তা কমতে থাকে। দুপুর পর্যন্ত কোথাও যানজট চোখে পড়েনি।
এদিকে যানবাহন স্বল্পতার কারণে মহাসড়কে কোনো কোনো স্টেশনে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। যাত্রী পরিবহন না পেয়ে ছোট ট্রাক, পশুবাহী ফিরতি ট্রাক ও মোটরসাইকেলে বাড়ি যাচ্ছেন যাত্রীরা। ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের থেকে অনেক বেশি হলেও তেমন কোনো অভিযোগ নেই কারও।
সরেজমিনে মঙ্গলবার সকাল থেকে চন্দ্রার আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন করা বাসগুলোকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তারা চন্দ্রার মূল পয়েন্টে না গিয়ে যাত্রীদের ডেকে বাসে তুলছেন। অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করলেও যাত্রীরা তেমন অভিযোগ করছেন না। যাত্রীরা বলছেন, ভাড়া বেশি হলেও নিরাপদে যেতে পারলেই খুশি তারা।
অপরদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত পরিবহনের ধীরগতি রয়েছে। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের বাসগুলো দীর্ঘক্ষণ সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছেন। এতে স্বল্প সময়ের জন্য পরিবহনের গতি আটকে যাচ্ছে। অতিরিক্ত বাস মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে কয়েক লেনে যাত্রী উঠানোর কারণে যান চলাচলে ধীরগতি দেখা দেয়। এছাড়া বৃষ্টির কারণে বাস ছাড়তেও দেরি হচ্ছে।
এদিকে, গণপরিবহন সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়া এড়াতে খোলা ট্রাক-পিকআপে চড়েই বাড়ি ছুটছেন মানুষ। ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ট্রাক-পিকআপে চড়ে বাড়ি ফেরার চিত্র দেখা গেছে। খোলা ট্রাকে যাত্রায় ভোগান্তি বাড়িয়েছে গুঁড়িগুড়ি বৃষ্টি।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদযাত্রায় বাসে দ্বিগুণ, জায়গা-ভেদে তিনগুণ ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে। কম ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য তাই ট্রাক-পিকআপে চড়েই চলাচল করছে ঘরমুখী মানুষ।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস এলাকা থেকে শেরপুর যাওয়ার উদ্দেশে জনপ্রতি ৩৫০ টাকা ভাড়ায় পিকআপে রওয়ানা হন শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, তারা ২৬ জন আছেন। সবাই পাশাপাশি কারখানায় কাজ করেন। সবার বাড়ি শেরপুরে। বাসে অতিরিক্ত ভাড়া; বাস পেতে ভোগান্তিসহ নানা কারণে পিকআপ ভাড়া করে একসঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ঝুঁকি থাকলে এমন ভ্রমণে আনন্দও আছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, বৃষ্টি ঠেকাতে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি বিশেষ ছাউনি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মহাখালী থেকে নেত্রকোণার উদ্দেশে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রওয়ানা হয়েছেন মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি একটি পোশাক কারখানায় কাজ করি। দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সকাল সকাল বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছি। কিন্তু দীর্ঘ সময় মহাখালীতে বাসের জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। অতিরিক্ত ভাড়াও দাবি করা হচ্ছে।’
যানবাহনের চাপ থাকলেও মহাসড়কে যানজট নেই। ছবিটি গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে তোলা
স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে জামালপুরের ইসলামপুরের উদ্দেশে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রওয়ানা দিয়েছেন আজহার উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘যানজট ও পরিবহন সংকটের কথা বিবেচনা করে সকালেই রওয়ানা দিয়েছি। রাস্তায় কোনো যানজট পাইনি, তবে ভাড়া কিছুটা বেশি। ভাড়া বেশি হলেও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আরামে বাড়ি যেতে পারলেই খুশি।’
গাজীপুর জেলা ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব খান বলেন, ‘ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে পুলিশ। এ লক্ষ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পুলিশের ৬০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন। রাস্তায় প্রচুর যাত্রী থাকলেও এখনো যানজটের হয়রানি ছাড়াই তারা বাড়ি যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক-পিকআপে চলাচল করছে। আমাদের নজরে আসা মাত্রই আমরা তাদের বুঝিয়ে নামিয়ে নিচ্ছি। আমরা যাত্রীদের অনুরোধ করব, পিকআপ-ট্রাক পরিহার করে ঝুঁকিমুক্ত ঈদযাত্রা করতে।’
গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘একসঙ্গে সব কারখানা ছুটি হওয়ায় ভোর থেকে যাত্রীদের চাপ থাকলেও দুপুরের পর কমে গেছে। সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে যাত্রীদের একটু অসুবিধা হচ্ছে, তবে সড়কে যানজট নেই।’
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ঘুরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছি। আশা করছি, এবারের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি হবে না।’