বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সড়ক ইজারা নিয়ে পশুর হাট, ভোগান্তি যানজটে

ধোলাইখালের বাসিন্দা ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমার বাসার দরজায় গরু বাঁধা। গাড়ি বের করতে পারি না। রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। সারা দিন মাইকে পশু বিক্রির ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। এতে এলাকাবাসী বিরক্ত।’

ঈদুল আজহা উপলক্ষে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার থেকে দয়াগঞ্জ মোড় পর্যন্ত সড়কে বসানো হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। হাটের জন্য প্রধান সড়কের পাশ ইজারা দেয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন এ পথে যাতায়াতকারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরজমিন দেখা গেছে, হাটটি রায়সাহেব বাজার মোড় সড়ক থেকে শুরু হয়ে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সড়ক, নারিন্দা, গোপী মোহন বসাক লেন, রথখোলা মোড়, নাসির উদ্দিন সর্দার রোড, রিষিকেশ রোড, বেগমগঞ্জ বাজার, গেণ্ডারিয়া রোড ও মুরগীটোলা মোড় হয়ে দয়াগঞ্জ মোড় পর্যন্ত চলে গেছে।

রায়সাহেব বাজার থেকে ধোলাইখাল হয়ে দয়াগঞ্জ মোড় পর্যন্ত প্রধান সড়কের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার, আরও তিন কিলোমিটারের বেশি পার্শ্ব সড়ক নিয়ে আনুমানিক ছয় কিলোমিটার সড়কজুড়ে পশু বিক্রি চলছে।

সড়কে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। বিক্রির জন্য বেঁধে রাখা হয়েছে গরু। এতে পথচারীদের হাঁটাও কষ্টকর হয়ে গেছে। ছবি: মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

সড়কের দুপাশে, সড়কদ্বীপে, ফুটপাতে বাঁশ বেঁধে গরু-ছাগল রাখা হয়েছে। কিছু স্থানে বাঁশ দিয়ে পুরো সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে হাট কর্তৃপক্ষ। এতে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। অপরদিকে সারা দিন উচ্চশব্দে মাইকে বাজানো হচ্ছে।

এদিকে যাত্রাবাড়ী থেকে সদরঘাটে চলাচল করা বাহাদুর শাহ পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কাও নেই এ হাটে। হাটে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী, ত্রেতা-বিক্রেতার কেউ মাস্কসহ অন্যান্য সাধারণ স্বাস্থ্যবিধিও মানছেন না। ফলে করোনাসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগের ঝুঁকিও রয়েছে।

কোরবানির এ হাটে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে গরু নিয়ে আসা হচ্ছে। ট্রাকগুলো সড়কের ওপর দীর্ঘক্ষণ রেখে দেয়ায় যানজট মাত্রা ছাড়াচ্ছে।

সাধারণ পরিস্থিতিতে দয়াগঞ্জ মোড় থেকে রায়সাহেব বাজার আসতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এখন এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে।

এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সর্বত্র পশু বেঁধে রাখায় মানুষ সড়ক-ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছে না। সে সঙ্গে বৃষ্টিতে সড়কের যতটুকু ফাঁকা রয়েছে তাও বেহাল।

নারিন্দা রোডের হোটেল ব্যবসায়ী মাসুম শিকদার বলেন, ‘দোকানের সামনে গরুর হাট বসিয়েছে। গরুর প্রস্রাব-গোবরের গন্ধ আর হাটের মানুষের ভিড়ে ব্যবসার একদম বারোটা বেজে গেল।’

রায়সাহেব বাজার রোডে দাঁড়িয়ে রবিউল হুসাইন নামের এক লঞ্চ যাত্রী বলেন, ‘আমি সদরঘাট যাব। কিন্তু লঞ্চ মিস করে ফেলছি। অন্য সময়ে যাত্রাবাড়ী থেকে সদরঘাট হেঁটে আসতেও সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট সময় লাগত। এখন কিছু দূর হেঁটে, কিছু দূর রিকশায় এসেও প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। বেঁধে রাখা গরু, গরুর ট্রাক আর হাটের মানুষের ভিড়ে হাঁটাও কষ্টকর।’

ধোলাইখালের বাসিন্দা ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমার বাসার দরজায় গরু বাঁধা। গাড়ি বের করতে পারি না। রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। সারা দিন মাইকে পশু বিক্রির ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। এতে এলাকাবাসী বিরক্ত।’

একই এলাকার দোকানি জালাল মুন্সি বলেন, ‘আমার দোকানের সামনে গরু বেঁধে রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। পরে অনুরোধ করায় সরিয়ে নেন।’

বাসিন্দা মিরাজ ব্যাপারি বলেন, ‘এলাকার রাস্তা আর ফুটপাত ব্যবহার করতে পারি না। রাস্তায় শুধু পশুর বর্জ্য।’

হাটের ইজারাদার মো. আনোয়ার সড়কের ওপর হাট বসানোতে ভোগান্তির বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে প্রসঙ্গ বদলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের আমরা সব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। ঈদের দিন পর্যন্ত এ হাট চলবে। আমাদের ভলেন্টিয়াররা আছেন, তারা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।’ এ ইজারাদার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সারোয়ার হোসেন আলোর অনুসারী এবং ইজারা নিয়ে তা ১২ থেকে ১৪ জনকে ভাগ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

হাট দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাকির বলেন, ‘আমাদের ভলান্টিয়াররা কিছু সময় রাস্তা বন্ধ রাখছে। আবার খুলে দিয়েছে। আমরা তো সারা বছর মানুষকে কষ্ট দিইনি। দুই-তিন দিন কষ্ট করবে মানুষ।’

হাটের দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক আবুল কালাম বলেন, ‘এ অবস্থায় সড়কে গাড়ি চলা মুশকিল। গাড়ি সাইড দিতে আমরা মাইকিং করি। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করি।’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘কেউ ভোগান্তিতে পড়লে থানা কিংবা আমাদের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। আমরা কারও যাত্রাপথ বন্ধ করতে হাট বসাইনি। অসুবিধার কথা জানিয়ে কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ ব্যাপারে ডিএসসিসির ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সারোয়ার হোসেন আলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘ইজারা দিয়েছে সিটি করপোরেশন। তারা কেনো সড়কে দিয়েছে তারাই বলতে পারবে। আমার ওয়ার্ডের আওতাধীন অংশে আমি নিয়মিত খবর রাখছি।’

সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের পুলিশ সদস্যরা এখানে নিয়মিত টহলে যাচ্ছে, ওরা ওটা দেখাশোনা করছে। সড়কের দুপাশ দুটি থানার অধীনে। এক পাশে ওয়ারী, অপর পাশে সূত্রাপুর। সামনে আবার গেন্ডারিয়া আছে, ওখানে গেন্ডারিয়া থানাও দেখছে। কিছুটা অংশ ওয়ারী থানায়ও পড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গরুর হাট হলে একটু তো যানজট হবেই। পুরান ঢাকায় জায়গার সংকট। তারপরও গাড়ি চলাচল অব্যাহত আছে।’

এ বিভাগের আরো খবর