বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নিলামের টাকা শুধু নয়, নিলামই গায়েব

  • আবদুল জলিল, খাগড়াছড়ি   
  • ২৬ জুন, ২০২৩ ২২:১২

নিলামের কাগজপত্রে উল্লিখিত সর্বোচ্চ দরদাতা রাজ্যময় চাকমা অকপটে স্বীকার করে বলেন, ‘মূলত এটি রিকুইজিশন। তবে একজনের ভাগে কত টাকা লাভ পাব, সেটা পার্টনারদের সঙ্গে হিসেবের পর বলা যাবে।’

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সরকারি পরিত্যক্ত ভবন নিলামে বিক্রির অনিয়মের অনুসন্ধানে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে। প্রকৃতপক্ষে নিলামের কোনো ডাকই হয়নি। নিলামে অংশগ্রহণকারী যে ৩ জনের নাম দেখানো হয়েছে তাদের দুইজন সেদিন উপস্থিতই ছিলেন না। সর্বোচ্চ দরদাতা দেখিয়ে যার নামে ভবনগুলো দেয়া হয়েছে, নিলামের দিন তিনি ব্যক্তিগত কাজে চট্টগ্রাম অবস্থান করছিলেন।

১৬ জুন নিউজবাংলায় ‘নিলামের টাকা গেল কই!’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷ এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে উপজেলার সর্বত্র আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে।

অপরদিকে কথিত নিলাম ডাকের বৈধতা প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে নতুন কৌশল। সে অনুযায়ী দেখানো হচ্ছে, এ বছরের ৪ জানুয়ারি নিলাম ডাক অনুষ্ঠিত হয়। নিলামে অংশগ্রহণকারী ছিলেন তিনজন। এরমধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা বোয়ালখালী কামাকুছড়া এলাকার রাজ্যময় চাকমা, ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকায় দ্বিতীয় দরদাতা কবাখালী মুসলিম পাড়ার নুর হোসেন এবং ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকায় তৃতীয় দরদাতা ছিলেন দীঘিনালা থানাপাড়ার বিল্লাল হোসেন।

প্রকৃতপক্ষে, আলোচনার মাধ্যমে ভবনগুলো সাড়ে ৩ লাখ টাকায় ক্রয় করেন কাগজে দেখানো তৃতীয় দরদাতা বিল্লাল হোসেন। অথচ নিলাম ডাকের কাগজপত্রে ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকায় বিল্লাল হোসেনকে দেখানো হয়েছে তৃতীয় দরদাতা।

এ বিষয়ে বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘জনৈক ব্যক্তির বাসায় নুর হোসেনের (কাগজে দেখানো দ্বিতীয় দরদাতা) সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এ ক্রয়-বিক্রি প্রক্রিয়াটি হয়েছে।

‘নিলাম ডাক বলতে কোনোকিছুই হয়নি। আমি নিজেও কোনো নিলাম ডাকে অংশগ্রহণ করিনি; এমনকি কোনো কাগজপত্রে স্বাক্ষরও করিনি।’

উল্টো প্রশ্ন রেখে বিল্লাল বলেন, ‘আমি সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারলে নিলাম ডাকে উপস্থিত থাকলে কি আর ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ডেকে তৃতীয় দরদাতা হতাম? আর ঐ জিনিস কি পরে দুই লাখ টাকা দিয়ে কিনে নিতাম?’

সর্বোচ্চ দরদাতা রাজ্যময় চাকমাও বলেছেন একই ধরনের কথা। তিনি বলেন, ‘নিলাম ডাকের যে তারিখ বলা হচ্ছে, সেসময় আমি ব্যক্তিগত কাজে চট্টগ্রাম অবস্থান করছিলাম।’

এ ছাড়া নিলাম ডাকের কাগজপত্রে রাজ্যময় চাকমার নামের পাশে যে মোবাইল নম্বরটি দেয়া আছে, সেটা তার নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

‘তাহলে ভবন আপনার নামে কিভাবে দেয়া হলো?’- প্রশ্নের জবাবে রাজ্যময় বলেন, ‘এটি একটি লাভের কাজ। কাজটিতে জড়িত থাকলে লাভ হবে, একথা আমাকে জানানো হয়েছিল। আমি রাজি হলে আলোচনার মাধ্যমেই লোক দেখানো প্রক্রিয়াটি কাগজে-কলমে সম্পন্ন করা হয়।’

এসময় রাজ্যময় অকপটে স্বীকার করে বলেন, ‘মূলত এটি রিকুইজিশন। তবে একজনের ভাগে কত টাকা লাভ পাব, সেটা পার্টনারদের সঙ্গে হিসেবের পর বলা যাবে।’

এদিকে নিলামের কাগজে রাজ্যময় চাকমার নামের পাশে থাকা মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন দিলে রিসিভ করেন নিলামের দ্বিতীয় দরদাতা হিসেবে উল্লেখ করা নুর হোসেন। নুর হোসেন পেশায় একজন ঠিকাদার; সেসঙ্গে সংবাদকর্মী হিসেবেও পরিচয় দেন তিনি।

ফোন রিসিভ করার পর বিষয়টি বুঝতে পেরে কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর তার ব্যবহৃত অন্য নম্বরে ফোন দিলেও আর তিনি রিসিভ করেননি।

দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মোস্তফা কামাল মিন্টু বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের কোনো ভবন নিলামে বিক্রি বা কোনো নিলাম ডাকের কিছুই শুনিনি। সংবাদ প্রকাশের পর আমি বিষয়টি জেনেছি।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবদুস সালাম জানান, নিলাম ডাক ও এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্রে তিনি স্বাক্ষর করেছেন কিনা এসবের কিছুই তার মনে নেই।

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাশ বলেন, ‘নিলাম প্রক্রিয়াটি নিয়মের মধ্যে হয়নি।’

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলমের সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে তিনি বিষয়টি দেখবেন।

দীঘিনালা মডেল মসজিদ নির্মাণ করতে এ বছরের ৪ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদের পুরনো কমিউনিটি সেন্টার, উপজেলা পরিষদ ও শিক্ষা অফিসের টিনশেড ভবন (সর্বশেষ কৃষি ব্যাংক হিসাবে ব্যবহৃত) বিক্রি করতে নাটকীয় এক নিলাম সাজানো হয়। সাড়ে ৩ লাখ টাকায় ভবন বিক্রি করা হলেও সাজানো ওই নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতার ডাক ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেখিয়ে কোষাগারে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা করা হয়। অথচ স্থানীয়দের ধারণা প্রকাশ্যে নিলাম ডাকা হলে ভবনগুলোর দাম আরও বেশি পাওয়া যেত।

এ বিভাগের আরো খবর