বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রকৌশলীকে অবরুদ্ধ করে চেকে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ ইউএনওর বিরুদ্ধে

  • প্রতিবেদক, বরিশাল   
  • ২৬ জুন, ২০২৩ ২১:২০

উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমিও একজন সরকারি কর্মকর্তা। কাজ শেষ না হওয়ায় বিধি ভেঙে আমাকে চাপ দিয়ে চেকে স্বাক্ষর করিয়ে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে রেখেছেন। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করবেন।’

বিধি ভেঙে চেকে স্বাক্ষর না করায় উপজেলা প্রকৌশলীকে দুই ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, স্বাক্ষর নিতে তিনি প্রকৌশলীকে ওই সময় গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন এবং ভ্রাম্যমান আদালতে দণ্ড দেয়ার প্রস্তুতি নেন বলেও অভিযোগ করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম।

রোববার বিকেলে বাবুগঞ্জ উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংক খানপুরা শাখায় ঘটনাটি ঘটে।

এসময় ইউএনও বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীকে ব্যাংকের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখলে ব্যাংক সেবায় বিঘ্ন ঘটে। সেবা প্রত্যাশীদের এসময় ব্যাংকের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ওই প্রকৌশলীকে আটকে রাখা হয়। পরে স্বাক্ষর দিলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মুচলেকায় প্রকৌশলীকে বের হতে দেন ইউএনও। এসময় ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগ নেতারা তড়িঘড়ি করে ব্যাংক থেকে বের হয়ে যান। গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।

ঘটনার বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এডিপি প্রকল্পের প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। সেই টাকা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মহোদয় দু’জনের যৌথ অ্যাকাউন্ট করে রাখার পরিকল্পনা করেন যাতে পরবর্তীতে কাজ করিয়ে টাকা দিতে পারেন।

‘আমরা সরকারি চাকরি করি। যেকোনো সময়ে ইউএনও বা আমি বদলি হয়ে যেতে পারি। তখন ওই টাকা কাজ ছাড়াই বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য আমি বলেছি, যৌথ অ্যাকাউন্টে শুধু ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান নয় আমাকেও যুক্ত করা হোক। কিন্তু বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মেনে না নিয়ে রোববার বিকেলে আমাকে সোনালী ব্যাংক খানপুরা শাখায় দুই ঘণ্টা একটি কক্ষে আটকে রাখেন। এসময়ে ইউএনও আমাকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। আনসার সদস্য দিয়ে আমাকে অপমান করান।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমিও একজন সরকারি কর্মকর্তা। কাজ শেষ না হওয়ায় বিধি ভেঙে আমাকে চাপ দিয়ে চেকে স্বাক্ষর করিয়ে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে রেখেছেন। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করবেন।’

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সোনালী ব্যাংকের ওই শাখায় একজন জনপ্রতিনিধিসহ ইউএনও নুসরাত ফাতিমা উপজেলা প্রকৌশলীকে আটকের হুমকি দেন। ইউএনও নুসরাত ফাতিমা তার সঙ্গে থাকা দু’জনকে ডেকে বলেন, ‘অ্যাই সাইফুল, জাহিদ এদিকে আসো। যতক্ষণ না করবে (স্বাক্ষর) ততক্ষণ বের হবে না। অ্যারেস্টেড, সোল ডাউন।

ওই ভিডিওতে বাবুগঞ্জ উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংকের ভেতরের চিত্র স্পষ্ট।

প্রত্যক্ষদর্শী গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, তারা খবর পেয়ে ব্যাংকের সামনে গেলেও ভেতর থেকে দরজা আটকানো থাকায় প্রবেশ করতে পারেননি।

তবে ভেতরে আটকা পড়া একটি সাংবাদিক সংগঠনের নেতা বলেন, “অসমাপ্ত প্রকল্পের চেকে স্বাক্ষর না করায় উপজেলা প্রকৌশলীকে আটকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হচ্ছিল। তিনি স্বীকার না করায় তাকে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয়। এমনকি এসময় ইউএনও আনসারদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলী গ্রেপ্তার। তাকে বের হতে দেবে না।’ এরপর প্রকৌশলীকে ইউএনওর নির্দেশে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয় এবং ব্যাংকের ভেতরে থাকা সেবা গ্রহীতাদের বাইরে বের করে দিয়ে ভেতর থেকে গেট আটকে দেয়া হয়।”

রোববার সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে উপজেলা প্রকৌশলী, ইউএনও ও স্থানীয় জনপ্রতিনধি ব্যাংকের শাখা থেকে বের হলেও তারা কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। এরপর থেকে উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম মোবাইল ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দেন। রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত তার মোবাইল ফোন নম্বরে চেষ্টা করেও সংযুক্ত করা যায়নি।

তবে রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে যেখানে উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম, ইউএনও নুসরাত ফাতিমা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জানকে এক খাবারের টেবিলে দেখা যায়।

নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঘটনার পর গণমাধ্যম এড়াতে উপজেলা প্রকৌশলীকে মোবাইল রিসিভ করতে বারণ করেছেন ইউএনও।

রোববার রা‌তে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা ব‌লেন, ‘জুন ক্লোজিংয়ে যেন বিলগুলো দ্রুত সময়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দিয়ে দেয় সেজন্য আমি সোনালী ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়েছিলাম। বিল কীভাবে দ্রুত পেতে পারেন সেজন্য তিনি, উপজেলা চেয়ারম্যান (কাজী ইমদাদুল হক দুলাল), উপজেলা প্রকৌশলী ও সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার একটি সভা করেছি। না হলে টাকা ল্যাবস হয়ে যাবে এবং ঠিকাদারদের বিল দিতে পারবো না।

এসময় তিনি প্রকৌশলীর অভিযোগ অস্বীকার বলেন, ‘অথচ বাইরে ঘটনা চাউর হয়েছে যে, জোর করে বিল দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিল কাউকে দেয়া হয়নি। যা সত্যি নয়।’

তবে সোমবার সকালে মুঠোফোনে ইউএনও নুসরাত ফাতিমা বলেন, ‘রোববার উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা চেয়ারম্যান, দু’জনের মাথাই গরম ছিল। আমি তাদের দু’দিকে সরিয়ে দিয়েছি। অ্যারেস্টেড শব্দটি উপজেলা চ্যেয়ারম্যান বলেছেন।’

কিন্তু ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে শব্দটি নারী কণ্ঠের এবং উপজেলা চেয়ারম্যান কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেন কিনা- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘তাহলে ভিডিওতে কী আছে আমাকে তা জেনে বলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘রোববার রাত অব্দি আমি, উপজেলা প্রকৌশলী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মিলন একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছি। এখন প্রকৌশলী কী বলেছেন, কেন বলেছেন, তাকে ডেকে পাঠিয়ে জানছি।’

বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান মিলন বলেন, ‘ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে বার্তা ছিল উপজেলা প্রকৌশলী ঠিকাদারদের টাকা দিতে বাধা দিচ্ছেন। এ খবর পেয়ে ইউএনওর সঙ্গে আমরাও ব্যাংকে যাই। টাকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চারটি ইউনিয়ন পরিষদের সংস্কার বাবদ ১০ লাখ টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া এডিপির (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) টেন্ডার হয়ে যাওয়া প্রায় ৬৭ লাখ টাকা রয়েছে।’

প্রকৌশলীকে কারাদণ্ড দেয়ার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘ইউএনওর ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল দেয়ার কথা ছিল অনেকটা কথার কথা।’

এ বিভাগের আরো খবর