নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধির জন্য দায়ী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সংকট তৈরি হবে বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেজন্য মন্ত্রণালয় আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বরাদ্দের ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
আলোচনায় বিরোধীদল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি অন্য একাধিক সংসদ সদস্যও নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর সমালোচনা করেন।
গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সবচেয়ে ব্যর্থ মন্ত্রণালয় হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাজারে গেলে মুখে মুখে শোনা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এতটাই ব্যর্থ, এটিকে মানুষ সিন্ডিকটবান্ধব মন্ত্রণালয় বলে।’
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট জড়িত অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘অনেকে সংসদে বলেছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী এর সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আমি এভাবে বলতে চাই না। এত কিছুর পরও কেন আপনি পদত্যাগ করেন না।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল কী কাজ করে? এত বড় একটি মন্ত্রণালয়। ...বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। এটা চাইলে অবশ্যই সম্ভব।”
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘গত কয়েক মাসে সারা বিশ্বে পণ্যের দাম কমলেও আমাদের দেশে তার প্রভাব পড়ছে না।’
একই ধরনের বক্তব্য আসে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান, পীর ফজলুর রহমান, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলুলের বক্তব্যেও।
এসব আলোচনা-সমালোচনার জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পণ্যমূল্য বাড়ছে বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাবে। আর দেশে যে সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া সম্ভব। তবে তাতে জটিলতাও আছে।
তিনি বলেন, ‘বাজারে সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়। এটা ঠিক যে বড় বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার- আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম। সেটা হয়ত করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে ক্রাইসিসটা (সংকট) তৈরি হবে, সেটা সইতে তো আমাদের কষ্ট হবে। এ জন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে চেষ্টা করি।’
পদত্যাগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে একজন তো আমাকে পদত্যাগ করতে বললেন। খুব ভালো কথা বলছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, উনি (মোকাব্বির) দায়িত্ব নিলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওনারে দায়িত্বটা দিতে পারেন। কোনো সমস্যা নেই আমার।’
সব কিছু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করে না মন্তব্য করে টিপু মুনশি বলেন, ‘তারপরও দায় আমি নিয়ে বলছি, আমরা সর্বৈবভাবে চেষ্টা করছি কী করা যায়। চিনির দামটা আমি নিজেও উপলব্ধি করি। ...স্বীকার করে নিচ্ছি, অনেক সময় বাস্তবায়নটা ধীরগতিতে হয়।’