বরিশাল সিটি করপোরেশনে গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করিমের ওপর হামলার বিষয়ে মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ পরিচালক শরিফুল আলম স্বাক্ষরিত সোমবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিইসির দুঃখ প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
বরিশাল সিটিতে সাম্প্রতিক নির্বাচনের দিন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলা হওয়ায় ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলা যাবে কি না, তা সিইসির কাছে জানতে চান এক সাংবাদিক। জবাবে সিইসি বলেন, ‘উনি কি ইন্তেকাল করেছেন?’
তার ওই বক্তব্যের পর নানা মহলে সমালোচনা হয়। ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করিমের রক্তাক্ত হওয়া নিয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের মন্তব্যে মানহানির অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল বাসেত।
নোটিশে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ চাওয়া হয়। পাশাপাশি মানহানির অভিযোগে ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।
ওই নোটিশ পাওয়ার পর সোমবার নিজের বক্তব্যের কারণে দুঃখ প্রকাশ করেন সিইসি। যদিও অভিযোগের তির সংবাদমাধ্যমের দিকে ছুড়ে সিইসি বলেন, তার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
কী আছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে
সিইসির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন সাধারণ নির্বাচন-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর আনুমানিক বিকাল ৫টার সময় উপস্থিত সাংবাদিকগণকে ব্রিফ করার সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের পক্ষে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর হামলা ও রক্তাক্ত করার বিষয়ে সাংবাদিকদের উপর্যুপরি প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সাথে গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট হতে বর্ণিত প্রার্থীর বর্তমান শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছেন।
‘ওই বিষয়টি বিকৃতভাবে ও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত প্রার্থীকে কটাক্ষ করেছেন এবং তার মৃত্যু কামনা করেছেন মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও নির্বাচন কমিশনকে হেয় প্রতিপন্ন করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করছেন মর্মে নির্বাচন কমিশনের গোচরীভূত হয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রকৃত বিষয় হলো বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্ণিত প্রার্থীর ওপর আক্রমণ হওয়ার ঘটনা অবহিত হওয়ামাত্রই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগণ দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তাগণকে নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্বাচন কমিশনের উক্ত নির্দেশনার আলোকে বরিশাল জেলা প্রশাসন ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্তপূর্বক বর্ণিত বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন মর্মে ১৪ জুন, ২০২৩ তারিখে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন।
‘ওই প্রতিবেদনসমূহ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে (১) মো. মঈনুল ইসলাম স্বপন ও (২) মো. জহিরুল ইসলাম রেজভীকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপর্যুক্ত ব্যক্তি ছাড়াও অন্যান্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে শনাক্তকরণসহ পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে এবং উক্ত বিষয়টি নির্বাচন কমিশন সার্বক্ষণিক তদারকি করে যাচ্ছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সাথে এবং কোনো রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর প্রতি অনুরাগ বা বিরাগভাজন না হয়ে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি কখনও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের মেয়র পদপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের সুনাম ও সম্মানের হানি ঘটে এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বর্ণিত প্রার্থীর মৃত্যু কামনা করেছেন মর্মে প্রচারিত সংবাদ ও বক্তব্য সম্পূর্ণ অলীক, মনগড়া, অনুমাননির্ভর ও ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত।
‘উক্তরূপ অসত্য সংবাদ ও বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। তদুপরি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কোনো মন্তব্য/বক্তব্যে কোনো ব্যক্তি মর্মাহত হলে তিনি তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
এর আগে ২০২২ সালে একটি দলের সঙ্গে সংলাপে বসে ‘নির্বাচনে কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে তা প্রতিরোধ করতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়াতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন সিইসি।
ওই বক্তব্য দেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান। ওই বছরের ১৯ জুলাই তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা কখনও কখনও ভুল করে ফেলি। এ জন্য আমি অনুতপ্ত।’