কোরবানির ঈদ দোরগোড়ায়। শুরু হয়ে গেছে পশু বেচাকেনা। যারা কোরবানি দেবেন তারা পশু কেনার পাশাপাশি ধারালো ছুরি, চাপাতি, বঁটিসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য সরঞ্জামের দোকানে ভিড় করছেন।
গত বছরের তুলনায় এবার ঈদ বাজারে কোরবানির পশুর দাম বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে পশু জবেহসহ মাংস কাটাকুটির সরঞ্জামেরও। ব্যতিক্রম হলো, বিগত বছরগুলোতে বঁটি-চাপাতি বিক্রি হতো পিস হিসেবে। এবার তা কিনতে হচ্ছে ওজন দরে। তারপরও এসব সরঞ্জামের বেচাবিক্রি বেড়েছে কয়েক গুণ।
রাজধানীর গাবতলী পশুর হাট সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি কামারের দোকান। সেসব দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাম বাড়লেও গত বছরের চেয়ে এবার তাদের বেচাবিক্রি বেশ ভালো। ঈদ সামনে রেখে তারা এক মাস ধরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাড়িয়েছেন উৎপাদন। প্রত্যাশা করছেন, বরাবরের মতোই ঈদের আগের রাত পর্যন্ত এসব বেচাবিক্রি চলবে।
গাবতলী হাটে ঢুকতেই হাতের ডান পাশ থেকে শোনা গেল লোহা পেটানো টুন-টাং শব্দ। এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল ব্যস্তসমস্ত কামারদের মহাযজ্ঞ। প্রতিটি দোকানে একদিকে জ্বলছে কয়লার চুলা। সেই কয়লার গনগনে আগুনে পোড়ানো হচ্ছে লোহার পাত। পাতগুলো তাপে লাল বর্ণ ধারণ করতেই তা আগুনের থেকে তুলে এনে পিটিয়ে দেয়া হচ্ছে নানা আকৃতি। বানানো হচ্ছে চাপাতি, বঁটি, ছুরিসহ দেশীয় নানা অস্ত্র।
কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির ঈদ এলেই তাদের বেচাবিক্রি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বাড়তি চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে তারাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিন-রাত শ্রম দিয়ে তৈরি করছেন পশু কোরবানি-সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদি।
বিশ্বজিৎ কর্মকার ওয়ার্কশপের মালিক বিমল কর্মকার নিউজবাংলাকে বললেন, ‘সারা বছর টুকটাক বেচাবিক্রি হলেও কোরবানির ঈদ এলেই আমার দোকানে বিক্রি ৫-৬ গুণ বেড়ে যায়। তাই ঈদের এক মাস আগে থেকেই অনেক ছুরি-বঁটি বানিয়ে রাখি। মূলত এই ঈদের এক সপ্তাহ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।’
তিনি বলেন, ‘গত ঈদ পর্যন্ত আমরা চাপাতি ও বঁটি পিস হিসেবেই বিক্রি করেছি। তবে এবার বিক্রি করছি কেজি হিসেবে। তবে ছুরিসহ অন্যান্য জিনিস এখনও পিস হিসেবেই বিক্রি করছি।’
দাম বাড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বিমল বলেন, ‘লোহা আর কয়লার দাম গত এক বছরে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। গত বছর যে লোহার কেজি ছিল দুইশ টাকা এখন সেই লোহার কেজি পাঁচশ টাকা।
‘এছাড়া গত বছর এক বস্তা কয়লার দাম ছিলো ১ হাজার ২০০ টাকা, যা এখন কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। সেজন্য এবার আমরা চাপাতি বিক্রি করছি ৬০০ টাকা কেজি দরে। আর বঁটি বিক্রি করছি ৮০০ টাকা কেজি। এগুলো ওজন করলে যতটুকু হয় সে অনুযায়ী দাম ঠিক হয়।’
কথা হলো তপন স্টোর নামে আরেক দোকানের মালিক জুট কর্মকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন বেচা-বিক্রি বেশ ভালো। প্রতিদিনই অনেক কাস্টমার আসছে। প্রচুর অর্ডারও পাচ্ছি।
‘আমার এখানে চাপাতি আর বঁটি বিক্রি হচ্ছে কেজি হিসেবে। শুধু আমি না, এখানে মোট ৯টি কামারের দোকান আছে। তারাসহ ঢাকার প্রায় সব জাইগায়ই চাপাতি আর বঁটি কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে এবার।
‘এছাড়া আমরা পশুর চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ২০০-৩০০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি করি। সাইজ অনুযায়ী এগুলোর দাম ঠিক হয়। ছোটগুলোর দাম কম আর বড়গুলোর দাম বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এগুলোর দাম ঠিক হয় লোহার দাম অনুযায়ী। চাপাতি ও বঁটি তৈরি হয় স্প্রিং লোহা দিয়ে। এই স্প্রিং লোহার দাম বেশি। তাই এগুলো কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। আর নরমাল লোহা দিয়ে তৈরি হয় ছুরিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। গত বছর এই নরমাল লোহার কেজি ছিলো ৭০-৮০ টাকা। এ বছর দাম বেড়ে ৩০০ টাকা উপরে উঠে গেছে। তাই আমরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।’
‘দাম যত বেশিই হোক কোরবানির ঈদে পশু জবাই, চামড়া ছাড়ানো, মাংস কাটার মতো কাজগুলো করতে মানুষের এগুলো লাগবেই। তাই আমাদের বেচাবিক্রিতে দাম তেমন একটা প্রভাব ফেলবে না।’