তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করতে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, লবিস্ট নিয়োগ করে বিবৃতি আনা দেশদ্রোহের শামিল। আর বিএনপি সে কাজটিই করছে।
রোববার দুপুরে ‘পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ বিষয়ে সেরা রিপোর্ট পুরস্কার প্রদান’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণমাধ্যম উন্নয়ন সংস্থা ‘সমষ্টি’।
সমসাময়িক বিষয়ের ওপর আলোকপাত করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। শান্তিরক্ষী পাঠানোর ক্ষেত্রে আমরা শীর্ষে রয়েছি। এটি নিয়েও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিনে কিছু পেশাদার বিবৃতিদাতা সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। যারা আমাদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য বিবৃতি দিয়েছিল এবং ২০১৩-১৪-১৫ সালে দেশে যখন মানুষ পোড়ানোর মহোৎসব চলছিল, সেটার বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়নি।
‘ইসরাইলি বাহিনী যখন ফিলিস্তিনের শিশুদের ঢিল ছোঁড়ার প্রত্যুত্তরে ব্রাশফায়ার করে পাখি শিকারের মতো মানুষ মারে, সেটির বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয়নি। অথচ সেই তারাই আমাদের শান্তিরক্ষী মিশন নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এটির সঙ্গে গভীর এক ষড়যন্ত্র যুক্ত।
‘একদিকে দেশের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র আর অন্যদিকে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করছেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আমাদের দেশ সফর করছেন। তাদের এই সফরকে উপলক্ষ করেই অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইস ওয়াচ এই বিবৃতি দিয়েছে।
‘জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ক্যাথেরিন পোলার্ড শনিবার আমাদের স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সদস্যদের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। যারা শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করছেন আমি তাদেরকে অভিনন্দন জানাই।’
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আগামী নির্বাচনটি হবে দেশে ‘হামিদ কারজাই’ মার্কা কোনো সরকার আসবে নাকি কোনো তাঁবেদার সরকার বসিয়ে বিশ্ব বেনিয়ারা তাদের স্বার্থ হাসিল করার অপচেষ্টা চালাবে, নাকি বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ গণতন্ত্র আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে- সেটির ফয়সালা। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনটি হবে দেশের ভূমি রক্ষার, সার্বভৌমত্ব রক্ষার নির্বাচন। সে জন্য সাংবাদিকসহ সবার সহযোগিতা চাই।”
এর আগে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে সাংবাদিকতা পুরস্কার আয়োজনের জন্য গণমাধ্যম উন্নয়ন সংস্থা ‘সমষ্টি’কে ধন্যবাদ এবং পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিসংখ্যানে ২০১৬ সালের চিত্র বলছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে ১০ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। তাদের ৪৩ শতাংশের বয়স ১ থেকে ৪ বছর। ‘পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য এবং আমাদের নদীমাতৃক দেশে প্রত্যেকের সাঁতার জানাটা আবশ্যক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে এনেছি। আশা করি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার শূন্যে নামিয়ে আনতে পারব।’
তথ্যমন্ত্রী পরে ১৩ পুরস্কার বিজয়ী- দ্য বিজনেস পোস্টের আরেফিন আপ্পি, চ্যানেল ২৪-এর জিনিয়া কবির সূচনা, দৈনিক প্রথম আলোর পার্থ শঙ্কর সাহা, জাগোনিউজের মাসুদ রানা, সময় ট্রিবিউনের সোহাগী আকতার, দৈনিক ভোরের কাগজের ঝর্ণা মনি, মাছরাঙা টিভি’র কাউসার সোহেলী, ডেইলি স্টারের নীলিমা জাহান, দৈনিক জনকণ্ঠের স্বপ্না চক্রবর্তী, দৈনিক সমকালের জাহিদুর রহমান, দৈনিক কালের কণ্ঠের সজীব আহমেদ, দ্য বিজনেস পোস্টের আসিফ ইসলাম শাওন এবং চ্যানেল আই অনলাইনের আরেফীন তানজীবের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে ও ‘সমষ্টি’ পরিচালক মীর মাসরুর জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনৈতিক প্রতিবেদক মাঈনুল আলম, বাংলাদেশ টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক (বার্তা) জাহিদুল ইসলাম, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর কমিউনিকেশন্স ম্যানেজার সারওয়ার ই আলম প্রমুখ।