আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনোদিন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, কিছুদিন আগের খবর ছিল যে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অনেক টাকা। আর প্রধানমন্ত্রী সুইজারল্যান্ড সফরের পরই নতুন খবর- সুইস ব্যাংকের টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে।
শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে তিনটি সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে দুটি প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সারাদেশে ভয়াবহ অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়ে আসছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশে চারটি নির্বাচন হয়েছে। একবার আওয়ামী লীগ ও একবার বিএনপি সরকারে এসেছে। ২০১২ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে সেই তত্ত্বাবধায়ক আইন বাতিল করে নিয়ে এলেন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন।
‘মানে হলো- শেখ হাসিনা সরকারে থেকে নির্বাচন হবে। এর পরের সব নির্বাচনে ভোট চুরি করে তারা ক্ষমতায় আছে। এই সরকার বৈধ সরকার নয়। আজকের সমাবেশের একটাই উদ্দেশ্য- শেখ হাসিনাকে বিদায় করা।’
তিনি বলেন, ‘বরিশালের মাটি রাজনৈতিক দিক থেকে অনেক ঐতিহ্যবাহী। মুকুন্দ দাসের জন্ম এই বরিশালে। শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক, যিনি অবিভক্ত বাংলার বীরত্ব লিখেছিলেন। এই বরিশালে অনেক ত্যাগী বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদেরও অনেকে এই বরিশালের মাটিতে রয়েছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আজকে নতুন একটা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এই সংগ্রাম ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। এই মঞ্চে ছাত্রদল নেতা ফিরোজ খান ও মিরাজের মা কিছুক্ষণ আগে বলে গেছেন, হাসিনা সরকারের সাদা পোশাকধারী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০১২ সালে তার স্কুলে পড়া ছেলে মিরাজ খান, কলেজে পড়া ছেলে ফিরোজ খানকে তুলে নিয়ে গেছে।
‘শুধু এই দুজন নয়, আমাদের ইলিয়াস আলীসহ ৭ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে এই সরকার। মিরাজ-ফিরোজের মা, ইলিয়াস আলীর সন্তানেরা অপেক্ষায় থাকে এই বুঝি তাদের সন্তান, তাদের পিতা ফিরে এলো। ছোট্ট শিশু সাফা বলেছে- আমি আমার বাবার হাত ধরে ঈদের নামাজ পড়তে যেতে চাই।
‘ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকার এই শিশুদের পিতৃহারা করেছে। মায়েদের কোল খালি করেছে। ভোলার রহিমের স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার বলে- তাদের অধীনে ভালো নির্বাচন হয়। বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করল। আমাদের আলেম সাহেব, শ্রদ্ধার মানুষ চরমোনাইয়ের নায়েবে আমিরকে আঘাত করতে পর্যন্ত দ্বিধা করলো না। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন? শেখ হাসিনা এমন নির্বাচন কমিশনার বানিয়েছেন যিনি (সিইসি) না মরলে শান্তি পান না।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধানে লেখা আছে যে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। অথচ সেই জনগণ ভোট দিতে পারে না। দুটি প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ নিজেরা নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বলে ভোট হয়ে গেছে; আমরা জিতে গেছি।
‘আওয়ামী লীগ এমনটা করেছে কারণ তারা জানে যে জনগণ ভোট দিতে পারলে তারা ১০টি আসনও পাবে না।’
ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ এনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কী পরিমাণ চুরি করেছে তা চিন্তাও করা যায় না। কিছুদিন আগেও খবর বেরিয়েছে যে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের অনেক টাকা জমা। আর অবৈধ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী যখন সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করে এলেন, তারপর খবর বের হলো যে সেই সুইস ব্যাংকের টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে।
‘দেশের জনগণ জানে যে আওয়ামী লীগ শুধু ভোট চোর না, এরা সব ক্ষেত্র থেকে চুরি করে। সরকার দেশে অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলো। ঘোষণা দিল ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার। তাহলে এতগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ গেল কোথায়? সরকারের একমাত্র লক্ষ্য চুরি-ডাকাতি করে বিদেশে অর্থ পাচার করা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এভাবে আর চলতে দেয়া যাবে না। আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
‘ফ্যাসিবাদী এই সরকারকে পরাজিত করে জনগণকে জয়ী করে ঘরে ফিরতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তবেই ঘরে ফিরব আমরা।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। বিশেষ বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকেই ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় শহরের মোড়ে মোড়ে ও সমাবেশস্থল ঘিরে কড়া পাহারায় ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।