ঈদুল আজহায় কোরবানিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গাবতলীর পশুর হাটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু নিয়ে আসছেন ব্যাপারিরা। তবে রাজধানীর একমাত্র স্থায়ী হাটটিতে পশু বিক্রি এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি।
ক্রেতারা এসে গরুর দাম জেনে যাচ্ছেন। অল্পসংখ্যক বিক্রিও হচ্ছে। ব্যাপারিরা বলছেন, অধিকাংশ ক্রেতা এসে ছোট গরু খুঁজছেন। অপরদিকে হাট ঘুরে ক্রেতারা বলছেন, ছোট গরুর দাম গত বছরের চেয়ে চড়া।
শনিবার গাবতলীর হাটে মিরপুরের বাসিন্দা মোহাম্মাদ শহিদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর গাবতলী থেকে চার মণ ওজনের একটি গরু ১ লাখ ৮ হাজার টাকায় কিনি। এবার একই আকারের গরুর দাম চাচ্ছে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। গতবারের চেয়ে এবার ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর দাম অনেক বেশি।’
‘গতবারের কথা ভেবে এবার বাজেট ঠিক করেছিলাম। তাই আজ চলে যাচ্ছি। পরিবারের সঙ্গে আলোচলা করে কাল-পরশু সিদ্ধান্ত নেব।’
ব্যাপারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্রেতা চাচ্ছেন সাধ্যের মধ্যে একটি গরু কিনতে। তাদের পক্ষে ১০/১৫ লাখ টাকায় গরু কেনা সম্ভব নয়। তারা সর্বোচ্চ দেড় লাখের মধ্যে গরু কিনতে চান। এ কারণে ছোট গরুর চাহিদা বেশি।
চাহিদা বাড়ায় ব্যাপারিরাও যেন পেয়ে বসেছেন। যে গরু ৮০ হাজার টাকায় বিক্রির মনস্থির করেছিলেন, সেটির দাম চাচ্ছেন এক লাখ টাকার বেশি। এতে ওজনভেদে বড় গরুর দামের সঙ্গে তুলনা করলে ছোট গরুর দাম চড়া।
মোহাম্মাদপুর থেকে গরু কিনতে আসা এনামুল হক বলেন, ‘আমরা পরিবারের সবাই মিলে কোরবানি দেই। এবার বাজেট ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। আজ দেখতে আসছি। এখানে ছোট গরুর দাম এবার অনেক বেশি। গত বার ৯০ হাজার টাকা দিয়ে যে গরু কিনেছি, এবার ওই আকারের গরুর দাম চাচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।’
কোরবানির পশু ঘিরে সবারই কম-বেশি আগ্রহ থাকে। পছন্দের গরু ছুঁয়ে দেখছেন এক তরুণ। শনিবার গাবতলীর হাটে। ছবি: নিউজবাংলা
শ্যামলী থেকে আসা আরেক ক্রেতা একরামুল হক ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় গরু কিনে ফিরছিলেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার গরুর দাম বেশি ভাই। গত ঈদে এই গরুর দাম ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি হতো না। এবার হাট ঘুরে বুঝলাম ছোট গরুর দাম ৩০-৩৫ হাজার টাকা বেশি। কাল-পরশু আরও বাড়তেও পারে, আবার কমতেও পারে। তবে একটু বেশি দাম হলেও আজ ঝামেলাবিহীন গরু কিনলাম।’
ব্যাপারিরা বলছেন, খাদ্যের দাম অনুপাতে গরুর দাম বাড়েনি। গতবারের তুলনায় লাভও কম হওয়ার শঙ্কা তাদের।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে ছয়টি ছোট আকারের গরু গাবতলীর হাটে নিয়ে এসেছেন আফজাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘গত বারের দামের সঙ্গে এবারের দাম মেলালে হবে না। এক বছর আগেও ভুষির কেজি ছিল ২০-৩০ টাকা, এখন ৬০-৬৫ টাকা। একটা গরু দিনে তিন কেজি পর্যন্ত ভুষি খায়।’
পাবনা থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যাপারি আখতার হোসেন বলেন, ‘এক বছরের ব্যবধানে গরুর সব ধরনের খাবারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু গরুর দাম ততটা বাড়েনি। নয়তো এক লাখ টাকার গরুর দাম দুই লাখ হতো।
‘গত বছর আনুমানিক ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকা মণ ধরে আমরা বিক্রি করেছিলাম। এবার ৩৩ থেকে ৩৪ হাজার টাকা মণ ধরে গরুর দাম চাচ্ছি। খাবারের দাম যে হারে বাড়ছে, সেখানে এটা খুব বেশি না।’
সিরাজগঞ্জ থেকে ‘কালো পাহাড়’ নামের বড় আকারের একটি গরু নিয়ে এসেছেন আকতার হোসেন। দুদিন আগেও দাম চাচ্ছিলেন ১০ লাখ টাকা। শনিবার আট লাখেই বিক্রি করবেন বলে জানালেন।
তিনি বলেন, ‘এবার হাটে ছোট গরুর দাম বাড়লেও বড় গরুর দাম তেমন উঠছে না। এবার বড় গরুর ব্যাপারিরা লস খাবে। ছোট গরু যে দামের খাবার খায়, বড় গরুও সেই দামের খাবার খায়। ছোট গরুর ব্যাপারিরা এক লাখ টাকার বদলে ১ লাখ ৩০ হাজারে বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু বড় গরু ব্যাপারিরা ১০ লাখের গরু ১৫ লাখ চাইতে পারবে না। অথচ আমাদের গরুর পেছনে খরচ বেশি।’