বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তদন্ত প্রতিবেদন জমার সময় আবারও পিছিয়েছে

  •    
  • ২৪ জুন, ২০২৩ ১৯:০১

নাটোরের লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ডের জন্য মেডিক্যাল রিপোর্ট আনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন সন্তান সম্ভবা শতাধিক নারী। বিষয়টি তদন্তে গঠিত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে ইতোমধ্যে দু’দফা সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্ত ডা. সুইটি রানী তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে তৎপরতা শুরু করেছেন।

নাটোরের লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সুইটি রানীর অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন জমার সময় আবারও পেছানো হয়েছে। ১ জুন তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে কমিটি। ১৩ জুন প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২০ জুন নির্ধারণ করা হয়েছিল। এবার আরেক দফা পিছিয়ে ২৬ জুন প্রতিবেদন জমার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্ত ডা. সুইটি রানী তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে তৎপরতা শুরু করেছেন।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ডের জন্য মেডিক্যাল রিপোর্ট আনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন সন্তান সম্ভবা শতাধিক নারী।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মেডিক্যাল রিপোর্ট আনতে ওই কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সুইটি রানীর কাছে যান তারা। সুইটি তাদেরকে পাঠিয়ে দেন ‘হেলথ কেয়ার’ নামে শহরের চকরামপুর এলাকার একটি ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে। সেখানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই আল্ট্রাসনোগ্রাফির পাশাপাশি এক গাদা পরীক্ষা করিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে গরিব অসহায়দের চার লক্ষাধিক টাকা।

অনর্থক বিভিন্ন মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে প্রতারণার শিকার এক গর্ভবতী। ছবি: নিউজবাংলা

গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর অভিযোগ তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেন জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মকর্তা। ১ জুন থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে কমিটি। তারই অংশ হিসেবে লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালুর উপস্থিতিতে তার কার্যালয়ে ৫ ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এরপর তদন্ত কমিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সুইটি রানীরও বক্তব্য নেয়।

সদর উপজেলার গাজিপুর বিল এলাকার জরিনা খাতুন জানান, মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ডের আবেদনের প্রয়োজনে মেডিক্যাল রিপোর্টের জন্য কিছুদিন আগে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সুইটি রানীর দ্বারস্থ হন তিনি। পরে সুইটি রানী তাকে পাঠিয়ে দেন ‘হেলথ কেয়ার’ নামে শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাফির পাশাপাশি অভিজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই একগাদা পরীক্ষা করে তার কাছ নেয়া হয় ১৬শ’ টাকা।

একই অভিযোগ করেন পাশের আটঘরিয়া গ্রামের গৃহবধু শাহিদা। তিনি জানান, বনপাড়ার জাহেদা হাসপাতাল থেকে তিনি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করান। সেই রিপোর্ট নিয়ে সুইটি রানীর কাছে গেলে তিনি জানিয়ে দেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার আগের কাগজপত্রে চলবে না। পরে তার নির্দেশনা অনুযায়ী হেলথ কেয়ারে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয় ২৫শ টাকা।

পুরো ইউনিয়নে সাথী, পাপিয়া, জেসমিন, আঁখি, লাইলি, আলেয়াসহ ১৩২ জন নারীর সঙ্গে একই ঘটনা ঘটেছে দাবি করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবার দাবি জানিয়েছেন রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী। এ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. পরিতোষ কুমার রায় জানান, একজন নারী সন্তানসম্ভাবা কিনা তা জানার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে এতো পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। শুধু মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমেই বিষয়টি জানা যায়। আরেকটু নিশ্চিত হওয়ার জন্য বড়জোর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা যেতে পারে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষা করারও বিধান নেই।

মেডিক্যাল রিপোর্ট আনতে গিয়ে অযাচিত টাকা খরচ করতে হয়েছে এই নারীকেও। ছবি: নিউজবাংলা

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এতোগুলো পরীক্ষা কেন করানো হলো- সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি হেলথ কেয়ার ডায়াগইস্টক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. ইসমাইল হুসাইনের কাছে। তবে ডা. সুইটির সঙ্গে সখ্য থাকার বিষয়টি তিনি অকপটেই স্বীকার করেন।

ডা. ইসমাইল বলেন, ‘রোগীরা এসে যে যে পরীক্ষা করতে বলেছেন আমরা শুধু সেই পরীক্ষাগুলোই করেছি। সুইটি রানী স্বাস্থ্য সেক্টরে একজন সরকারি কর্মকর্তা। সে হিসেবে ওনার সঙ্গে আমাদের একটা সুসম্পর্ক আছে। প্রয়োজন মনে করলে অনেক সময় পরিচিত জনকে আমাদের এখানে চিকিৎসার জন্য পাঠান তিনি।’

নিজের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন ডা. সুইটি। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। আমি কাউকে হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাইনি।’

উল্টো মিডিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার আগে দুইবার ভাবতে হবে। আপনারা আমাকে নিয়ে অনুসন্ধান করে ভারী অন্যায় কাজ করছেন।’

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর খোলাবইড়য়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের দেয়া মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতেই মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের আবেদন করা যায়। গরিব পরিবারের গর্ভবতী নারীদের কাছ থেকে এভাবে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সুইটি রানী ন্যক্কারজনক কাজ করেছেন। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

‘ঘটনাটির সমাধান চেয়ে ইতোমধ্যে আমার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। বিষয়টি পরিষদের মাসিক সভায় আলোচনা করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোসা. মাহফুজা খানম জানান, মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ডের প্রয়োজনে মেডিক্যাল রিপোর্ট করাতে শতাধিক নারী সুইটি রানীর কাছে যান। এ সময় সুইটি তাদের পাঠিয়ে দেন হেলথ কেয়ার নামে শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ অপ্রয়োজনীয় একাধিক পরীক্ষা করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।

ভুক্তভোগীরা এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ক্লিনিক্যাল কন্ট্রাসেপসনের সহকারী পরিচালক আব্দুর রউফ মল্লিককে আহ্বায়ক এবং সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান খানকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কমিটিকে ১৩ জুন প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। তবে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অসুস্থতার কথা বলে দু’দফা সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন।

কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রউফ মল্লিক জানান, ১৩ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে না পারায় তা বাড়িয়ে প্রথমে ২০ জুন ও পরে ২৬ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে। এই তারিখের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

তদন্তে কোনোরূপ প্রভাব বিস্তারের কথা অস্বীকার করেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর