একজন ব্যবসায়ীর নামে ভুয়া নোটিশ দিয়ে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে হাতেনাতে আটক হয়েছেন দুদক ডিজির পিএ। তার নাম গৌতম ভট্টাচার্য। তার সঙ্গে চাকুরিচ্যুত একজন পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুর অর রশীদ।
তিনি জানান, দুদকের মানিলন্ডারিং বিভাগের মহাপরিচালক মোকাম্মেল হকের পিএ গৌতম। এর সঙ্গে দুদকের আর কেউ জড়িত আছে কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার শুরু
ওই সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীর নাম আশিকুজ্জামান। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে আমদানি করা কার্পেট ও জায়নামাজ সরবরাহ করেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালে আশিকুজ্জামানের উত্তরার বাসায় দুদকের মনোগ্রাম সম্বলিত খামে নোটিশ নিয়ে এক ব্যক্তি আসেন।
অভিযোগ করেন, ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণের চোরাচালান এবং মানিলন্ডারিং করছেন আশিকুজ্জামান।
ওই ব্যক্তি আরও জানান, ডিবি, সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক ও এনএসআই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে। দুদকে তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে।
ডিবি জানায়, নোটিশ বহনকারী ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আশিকুজ্জামানকে কথা বলিয়ে দেন। হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের ওই কর্মকর্তা মোবাইলে কথা বলা সমীচীন নয় জানিয়ে দুদক অফিসে আসতে বলেন।
পরে আশিকুজ্জামানকে হোয়াটসঅ্যাপে দফায় দফায় কল দেয়া হয়। ভয় দেখানো হয় সম্পত্তি ক্রোক, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, প্রিন্টেড ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে সম্মানহানী করাসহ গ্রেপ্তার করিয়ে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
এক পর্যায়ে আশিকুজ্জামানকে মতিঝিলের হিরাঝিল হোটেলের দ্বিতীয় তলায় এসে সমঝোতার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
সমঝোতা অনুসারে প্রথমে দুই কোটি টাকা দিতে বলা হলেও পরে দিতে বলা হয় এক কোটি টাকা।
এক কোটি টাকার মধ্যে শুক্রবার জুমার আগে ২০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। বাকি টাকা রোববার পরিশোধের সমঝোতা হয়। বিনিময়ে সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতির নিশ্চয়তা দেয়া হয়।
প্রতারকদের ফাঁদের নিয়ন্ত্রণ নেয় ডিবি
ভুক্তভোগী বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগকে জানান। গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ দুদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং দুদকের উপপরিচালক নজরুল ইসলামসহ হোটেল হিরাঝিলের আশেপাশে অবস্থান নেন।
সমঝোতা অনুসারে আশিকুজ্জামান চারটি মিষ্টির প্যাকেটে দেড় লাখ টাকা নিয়ে হোটেল বহিরাঝিলে যান। তার কাছ থেকে ওই টাকা গ্রহণ করার সময় আশেপাশে অবস্থান করা ডিবি পুলিশ অভিযুক্তদের আটক করে।
আটক হওয়াদের মধ্যে এসকেন আলী খান চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ। অপর দুজন গোপালগঞ্জের বাসিন্দা।
ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘দুদকের পিএ গৌতম ভট্টাচার্য ও চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল মো. এসকেন আলী খান জানেন, একটা মানুষকে কীভাবে ডাকতে হবে এবং ডাকার পর তার কাছে কীভাবে টাকা চাওয়া যায়। এই চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় রয়েছে। তাদের টার্গেট ছিল ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী এবং যারা হঠাৎ করে বড় লোক হয়েছেন।’