বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে আশঙ্কাজনকভাবে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে সিরাজগঞ্জে। জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীগুলোর পানিও সে সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে। ফলে বন্যার আশঙ্কায় দিন পার করছেন নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষেরা।
দ্রুতগতিতে পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার সদর, চৌহালীর এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর উপজেলায় যমুনা নদীয়তে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের পাঁচিল গ্রামে দুইদিনে অন্তত ২৫টি বাড়িঘর ও অর্ধশত গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে বাড়িঘর হারিয়ে অসহায় মানুষজন অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচতে দ্রুত ঘর-বাড়ি ও আসবাপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় সচ্ছল কৃষকেরা রাতারাতি সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৩৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কাজিপুরের মেঘাই ঘাট এলাকায় ৩৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১ দশমিক ২৯ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ করতোয়া নদীর পানি উল্লাপাড়া পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার এবং বড়াল নদীর পানি শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি পয়েন্টে বেড়েছে ৬৪ সেন্টিমিটার।
পাঁচিল গ্রামের আব্দুল মমিন বলেন, দুই দিন আগেও আমাদের বাড়িঘর সব ছিল। আজ নদীতে সব হারিয়ে পথে বসেছি। নদীগর্ভে ঘর-বাড়ি বিলীন হওয়ায় কোথাও যাওয়ার মত অবস্থা নেই আমাদের। মাথা গোজার ঠাঁই হারিয়ে এখন ভাসমান মানুষে পরিণত হয়েছি আমরা।’
ওই গ্রামের জয়মালা খাতুন বলেন, ‘ভাঙ্গন এলাকার পাশেই কয়েক মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদাররা হাজার হাজার বালুর বস্তা প্রস্তুত করে ফেলে রেখেছে। কিন্তু ভাঙ্গন শুরু হলেও তা ফেলার ব্যবস্থা না করায় চোখের সামনে আমাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার ছিল না।’
এ ভাঙ্গন রোধে অবিলম্বে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ভাঙ্গন রোধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার বলেন, ‘উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন ধরেই যমুনার পানি বাড়ছে। এতে চরাঞ্চলের নিম্নভূমিগুলো প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। পানি আরও দুই-তিনদিন বাড়তে পারে।’
ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।