গাবতলী পশুর হাট রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র স্থায়ী হাট। সারা বছরই এই হাটে চলে পশু বেচাকেনা। তবে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এই হাটের কলেবর বাড়ে। বেচাবিক্রিতেও আর সব ভ্রাম্যমাণ হাটকে ছাপিয়ে যায়।
পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র ছয়দিন। তারপরও গাবতলী পশুর হাট পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে উঠতে পারেনি। এখনও চলছে প্রস্তুতির নানা কাজ। ঈদের বাজার সামনে রেখে ইতোমধ্যে এই হাটে গরু আমদানি শুরু হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে হাট ঘুরে দেখা যায়, এখনও বাঁশ দিয়ে গরু রাখার জায়গা তৈরি করা হচ্ছে। হাটে ফ্যান লাগানোসহ ইলেক্ট্রিকের কাজ চলছে। পুলিশের দুটি বুথ এবং ওয়াচ টাওয়ারও করা হয়েছে। তবে সেখানে কোনো পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
এদিকে হাটে যেসব গরু আনা হয়েছে হাটে সেগুলোরও বিক্রি তেমন নেই। হাটে চোখে পড়ার মতো ক্রেতাও নেই। আগতদের অধিকাংশই ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন। আর বিক্রেতারা অলস সময় পার করছেন।
গাবতলী গরুর হাটের প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করলে কিছু গরু চোখে পড়বে। তবে হাটের ভেতরের দিকটা এখনও ফাঁকা। বাঁশের আড় (গরু বাঁধার স্থান) বানিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে গরু রাখতে ব্যাপারিদের গরুপ্রতি ৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে।
গাবতলী পশুর হাটে শুক্রবার গরু কেনার পর ক্রেতার মন্তব্য- দাম বেশি। ছবি: নিউজবাংলা
‘গরুর দাম বেশি’
কোরবানি উপলক্ষে যারা গরু কিনবেন তারা এখনও হাটমুখী হচ্ছেন না। বিশেষত গরু রাখা ও লালনপালনে সমস্যার কারণেই ঈদের এক বা দুদিন আগে ক্রেতা হাটমুখী হয়ে থাকেন। গাবতলী পশুর হাটে শুক্রবার তেমন চিত্রই দেখা গেছে। সেভাবে ক্রেতা চোখে পড়েনি। তারপরও এক দুজন করে ক্রেতা হাটে আসছেন। কেউ কেউ কিনেও ফেলছেন।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গাবতলী গরুর হাট ইজারাদারের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখনও সেভাবে হাট জমে ওঠেনি। তারপরও সকাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০/৪০টি গরু বিক্রি হয়েছে। তবে এ বছর গরুর দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে।’
মিরপুরের মনিপুরীপাড়া থেকে আসা মো. সালেকিন মাঝারি আকারের একটি গরু কিনেছেন। তার মন্তব্য, ‘এ বছর প্রতিটি গরুতে অন্তত ২০ হাজার বেশি দাম দেখছি। হাটে গরুর চাপ এখনও কম। ক্রেতাও সেভাবে নেই।
‘৮৫ হাজার টাকা দিয়ে এই গরুটি কিনেছি। গত বছরের বাজার দরের সঙ্গে তুলনা করলে এ বছর আমাকে ২০ হাজার টাকা বেশি দিয়ে এই গরু কিনতে হয়েছে।’
হাট ও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব পালন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই ক্রেতা। বলেন, ‘গরু কেনার পর পিকআপ ভ্যানের লোকজন এসে দড়ি ধরে টানাটানি শুরু করে। এ বলে আমার পিকআপে ওঠেন, ওপাশ থেকে আরেকজন টান দিয়ে বলে আমার পিকআপে ওঠেন। হাটে কোনো পুলিশ দেখলাম না। কেউ দেখার নেই এগুলো।
খিলক্ষেত থেকে হাটে আসা মো. ইয়াসিন একটি গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘গত বছর এই সাইজের গরু কিনেছিলাম ৬৯ হাজার টাকা দিয়ে। এ বছর কিনলাম ৮০ হাজার টাকায়। গরুর দাম বাড়তি।’
গাবতলী পশুর হাটে শুক্রবার পুলিশের বুথ ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ছবি: নিউজবাংলা
অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা
হাটে গরু আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়ছে। তবে ক্রেতা তেমন একটা নেই। এ অবস্থায় শুয়ে-বসে অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, মঙ্গল-বুধবারের দিকে গরু বেশি বিক্রি হবে।
গাবতলী হাটে চুয়াডাঙ্গা থেকে ১১টি গরু নিয়ে এসেছেন মো. কোকোন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ সকালে এসেছি গরু নিয়ে। এখনও কেউ দাম বলে নাই। আমার কাছে আড়াই লাখ থেকে ৪ লাখ টাকার গরু আছে।’
কুষ্টিয়ার বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, ‘৫ থেকে ১০ হাজার দেয়া লাগতেছে গরু রাখতে। আর এই টাকা নিচ্ছে গরুর সাইজের ওপর ভিত্তি করে। গত রাতে আসছি। কাস্টমারের আশায় আছি।’
নওগাঁ থেকে মহিদুল ইসলাম ১৪টি গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের খামারের নাম আবু বক্কর ডেইরি ফার্ম। দেড় থেকে ৬ লাখ টাকা দামের গরু নিয়ে এসেছি। ভুষি, খড়, খুদের ভাত ও ঘাস খাওয়াই গরুগুলোকে। আড়ে বেঁধে বিক্রির জন্য হাট মালিকের লোক গরুপ্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার নিয়েছে।’
হাটে তোলা হয়েছে আমদানি বন্ধ হওয়া ইন্ডিয়ান বলদ। ছবি: নিউজবাংলা
হাটে উঠেছে ইন্ডিয়ান বলদ
টাঙ্গাইলের সরকার ক্যাটেল ফার্ম থেকে ৪২টি ইন্ডিয়ান বলদ আনা হয়েছে গাবতলীর হাটে। ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি বন্ধ থাকার পরও শুক্রবার এই গরু হাটে দেখা গেছে।
এই ফার্মের কর্মী মো. মমিন বলেন, ‘ইন্ডিয়ান এই বলদগুলোর একেকটির ওজন ১৩ থেকে ১৭ মণ। টাঙ্গাইল থেকে মোট ৪২টি গরু এনেছি আমরা। ১০ মাস আগে এই গরু সরকারি সব আইন মেনে দেশে আনা হয়। সেগুলো নিজেদের ফার্মে লালন-পালন করে বিক্রি করতে আনা হয়েছে।’
সরকারি কোন নিয়ম মেনে গরুগুলো আনা হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেটা মালিক জানে।’