ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির কর্মী সম্মেলনে পুলিশ এবং বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়লে লাঠিচার্জ করে পুলিশ দলটির নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বোয়ালমারী পৌর সদরের পাঞ্জারী অ্যাকাডেমির চত্বরে ঘটনাটি ঘটে।
জানা যায়, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় ও স্থানীয়ভাবে নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করতে এবং নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি।
বোয়ালমারীতে দীর্ঘদিন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য শাহ্ মো. আবু জাফর গ্রুপ এবং কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সভাপতি সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলাম গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল।
শুক্রবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয়, জেলা ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে সম্মেলন শুরু হয়। তবে সমাবেশস্থলে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হলে পুলিশ সভাস্থলে পৌঁছে সভাটি সংক্ষিপ্ত করে শেষ করার নির্দেশ দেয়। এতে আগত বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ২০ মিনিট সময় বেঁধে দেয়। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এক পর্যায়ে সভার বাইরে থাকা দলটির অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়লে সাংবাদিক ও পুলিশের কয়েক সদস্য আহত হন। পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে বোয়ালমারীর সাবেক পৌর মেয়র আব্দুস শুকুর শেখ, যুবদল নেতা ইমরান হোসেনসহ বেশ কয়েজন নেতা-কর্মীর আহত হন।
বিএনপির আহত নেতা-কর্মীরা স্থানীয় একটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সাবেক সাংসদ খন্দকার নাসিরুল ইসলাম।
কর্মী সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম কামাল মিয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান (মাশুক), কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর, ফরিদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোদাসসের আলী ইছা, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, ফরিদপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র আহবায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ, সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপন, পৌর বিএনপির সভাপতি শেখ আফসার উদ্দিন প্রমুখ।
কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত থাকা ও কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সভাপতি, সাবেক সাংসদ খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন উপজেলা-পৌর কমিটি পুরাতনদের নিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। সে জন্য কাদের নতুন নেতৃত্বে আনলে সংগঠন শক্তিশালী হতে পারে, এ বিষয় নিয়েই কর্মী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কিন্তু পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর ইশারায় সমাবেশে বাধা দেয়।
‘আমাদের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপির ও আওয়ামী লীগের কিছু লোক চায় না বোয়ালমারীতে বিএনপি শক্তিশালী হোক। তারা পুলিশকে দিয়ে এই ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। তবে পুলিশ বাধা দিলেও সল্প সময়ের মধ্যে আমরা সমাবেশ করতে পেরেছি।’
যে উদ্দেশ্য নিয়ে কর্মী সমাবেশ করা হয়েছে, সে উদ্দেশ্য সফল হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যপারে সম্মেলনস্থলে থাকা কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, ‘পুলিশের কাছ থেকে পূর্ব-অনুমতি নেয়ার পরও আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়ে বন্ধ করে দেয়। লাঠিচার্জে আমাদের নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দ জানাই।’
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, ‘আজ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলা সদরে দলীয় কার্যক্রম চলছে। সে কারণে আজকের দিনটা বাদ দিয়ে অন্য কোনো দিনে সমাবেশ করার জন্য বিএনপিকে অনুরোধ করা হয়।
‘তবে এ উপজেলায় বিএনপির মধ্যে এমনিতেই দুটি শক্তিশালী গ্রুপ রয়েছে। প্যান্ডেলের ভিতরে কিছু লোক রয়েছে, আবার বাইরেও অনেক লোক রয়েছে। পুলিশ গিয়ে আজ সমাবেশ না করার অনুরোধ করলে প্যান্ডেলের বাইরে থাকা লোকজন পুলিশের উপরে আক্রমণ করে। তখন পুলিশও তাদেরকে ধাওয়া দেয়।’